27.9 C
আবহাওয়া
৩:৫০ পূর্বাহ্ণ - মে ১৮, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না! তবে-

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না! তবে-

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে না! তবে-

।। বাবর মুনাফ ।।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি জোরালো হয়েছে। এই দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে সরকার। এই ব্যাপারে সরকার যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পরিস্কার করা হয়নি। তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছে, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শুক্রবার (৯ মে) সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনও সরকার বিবেচনায় রাখছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে সকলকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

YouTube player

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জনদাবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতোমধ্যে প্রচলিত আইনের আওতায় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর মৌন সম্মতি থাকলেও বিএনপির সম্মতি নেই।

শুক্রবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নই।

মঈন খান বলেন, এটা নিয়ে আমাদের দলের মহাসচিব বলেছেন- ‘এটা জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা নির্বাচন করবে, আর কারা করবে না।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, তারা কি আসলে গণতন্ত্র চায়? গত ৯ মাসে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কি বলেছে- গত ১৫ বছর তারা মানুষের ওপর ফ্যাসিস্ট কায়দায় জুলুম করেছে, লুটপাট করেছে, দেশকে তছনছ করে দিয়েছে, তারা ভুল করেছে, দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা স্বীকার করে নিচ্ছে?

তিনি আরও বলেন, এরশাদের পতনের পর এখনকার অন্তর্বর্তী সরকারের মতো একটি সরকার গঠন করা হয়েছিল। সেই সময়কার সরকার তিন মাসের মধ্যে দেশবাসীকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিল। আজকে সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো সমালোচনা করে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে গেলে তার জন্য অনির্দিষ্ট সময় পিছিয়ে নিতে হবে, তার কোনো যুক্তিযুক্ততা নেই।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বৃহস্পতিবর রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফর্মালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।’

আসিফ মাহমুদের এই স্ট্যাটাসে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হলেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনটি দাবির কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দাবিগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এরপর এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ অনেকেই একই পোস্ট দিয়েছেন।

পরে নাহিদ ইসলাম আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে দেশের ভিতরে চাপ থাকলেও নিষিদ্ধ চায় না জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের ভাষ্য আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। এই অবস্থায় আন্দোলনরত জাতীয় নাগরিক পার্টি, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজত ইসলাম ও অন্যান্য চাপসৃষ্টিকারী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সময় নিয়ে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ডাক দিয়েছে। তাতে জনশক্তি যোগান দিচ্ছে হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবির। বিএনপি রাজপথে তাদের শক্তি কতটুকু এবং সরকার তাদের চাপে এককভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে কতটা ভূমিকা রাখবে তা দেখতে চায়!

বিএনএনিউজ/ শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ