29 C
আবহাওয়া
১:১১ অপরাহ্ণ - মে ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৮ (ভোলা-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৮ (ভোলা-৪)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ভোলা-৪ আসনের হালচাল।

ভোলা -৪ আসন 

ভোলা-৪ সংসদীয় আসনটি মনপুরা এবং চরফ্যাশন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১৮তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম এম নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ৭১ হাজার ৮ শত ৭৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এম নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৭ শত ১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির নাজিউর রহমান মঞ্জুর। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৬ শত ৩৮ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৬ শত ২৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৩ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জাফরউল্লা চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৩ হাজার ২ শত ১৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম নির্বাচিত

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮১ হাজার ৪ শত ৫৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৯ শত ৬১ জন। নির্বাচনে বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ২ শত ২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৯ শত ৩৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭ শত ১০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯শত ৪২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৭ হাজার ৫ শত ৩ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৩ শত ৪৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলম এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬ হাজার ৪ শত ৮১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম,২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ভোলা-৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভোলা -৪ আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৪.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৫২%, বিএনপি ১২.৬৭%, জাতীয় পার্টি ৩০.১০% , জামায়াতে ইসলামী ৯.৮৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৮৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.১৬%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৩৭%, বিএনপি ৫৫.৬৩%, জাতীয় পাটি ১.৮১%, জামায়াতে ইসলামী ২.৮০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৩৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৫.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.০৯%, ৪দলীয় জোট ৬০.০৩%, জাতীয় পার্টি ০.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৮৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৭৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.৫১%, ৪দলীয় জোট ৪১.৪৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.০১% ভোট পায়।

ভোলা-৪ মনপুরা এবং চরফ্যাশন সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনি চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিও। এক সময়ের অবহেলিত এই দ্বীপে গত ১৪ বছরে এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। চরফ্যাশনের কুকরি মুকরির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল যেন এক মিনি সুন্দরবনে পরিণত হয়েছে। চরফ্যাশনের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের মধ্যে ২২৫ ফুট উচ্চতার সবচাইতে উঁচু জ্যাকব টাওয়ার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

জ্যাকবের আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন, সম্প্রতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এ ঘোষণায় নতুন করে হিসাব কষতে শুরু করেছেন চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা।

এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডাকসুর সাবেক এজিএস, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাজিম উদ্দিন আলম। তিনিও দলীয় কোন্দলের কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। তাঁর বিপরীতে মনোনয়ন চাইছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন। বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা হাইকোর্টের আইনজীবী মো. ছিদ্দিকুল্লাহ মিয়া।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি কেফায়েতুল্লা নজিব, চরফ্যাশন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মনিরুজ্জামান শহীদ এবং একই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মনোনয়ন চাইবেন।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন থেকে মনোনয়ন চাইবেন, একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী মহিবুল্লাহ এবং দলের ভোলা জেলার (দক্ষিণ) সভাপতি আলাউদ্দিন হাজি।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভোলা-৪ আসনে কোনো দলের একক আধিপত্য ছিল না। কখনো আওয়ামী লীগ, আবার কখনো বিএনপির দখলে ছিল। তবে ২০০৮ সাল থেকে আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কবজায়। ১৯৯৬ ও ২০০১ সাল পর্যন্ত এই আসনটি টানা ১০ বছর বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলমের দখলে ছিল। এরপর ২০০৮ থেকে সাবেক সাংসদ মরহুম অধ্যক্ষ এমএস নজরুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ পুত্র, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাক্‌ব বিএনপির কাছ থেকে ভোলা-৪ আসনটি উদ্ধার করেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অন্তকোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ইমেজ সংকটে রয়েছে উভয় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থী যেমনই হোক সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানে-সমান।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১৮তম ভোলা- ৪ মনপুরা এবং চরফ্যাশন সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ