31 C
আবহাওয়া
২:১৯ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫৩ (ময়মনসিংহ-৮)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫৩ (ময়মনসিংহ-৮)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-৮ আসনের হালচাল।

ময়মনসিংহ-৮ আসন 

ময়মনসিংহ-৮ সংসদীয় আসনটি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৫৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টীর খুররাম খান চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৩ হাজার ৭ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টীর খুররাম খান চৌধুরী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ২ শত ৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি গোলাম নবী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৫ হাজার ৯৫ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির জয়নুল আবেদীন জায়েদী কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির জয়নুল আবেদীন জায়েদী কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৯১ হাজার ৪ শত ৩৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টীর রওশন এরশাদ । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৯ শত ৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শাহ নুরুল কবির বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪ হাজার ৪ শত ২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩ শত ২৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির শাহ নুরুল কবির বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ১ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৮ শত ৮৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ৫ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৯ শত ১২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুস সাত্তার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ১ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহ নুরুল কবির। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৪১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিনা প্রতিদ্বন্দিতায়নির্বাচিত হন।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭১ হাজার ১ শত ৯৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩ হাজার ৫ শত ৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এ এইচ এম খালেকুজ্জামান,আম ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টি-এনপিপির আবদুল আল মামুন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মোঃ হাবিবুল্লাহ্, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের সাইফ উদ্দিন আহমেদ মনি, ছাতা প্রতীকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি এম এ বাশার , সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহ্‌মুদ হাসান সুমন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭ শত ৬৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ এইচ এম খালেকুজ্জামান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৪ হাজার ৬৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি , ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-৮ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৮ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৪.৯৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৮.০৮%, বিএনপি ২০.৪৬%, জাতীয় পাটি ২৪.৬৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৬.৭৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৬৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২২%, বিএনপি ১৯.৮৯% জাতীয় পাটি ৩৫.৯৯% , জামায়াত ইসলামী ৫.৯৫ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৬৭ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৩৪ %, ৪ দলীয় জোট ৪২.৭৭%, জাতীয় পার্টি ৪.৩৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৭.৫১% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৭.৫৮ %, ৪দলীয় জোট ৩১.৮১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৬১% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবার জোটের মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস ছাত্তার, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের সদস্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবীর শাহীন ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ব্যবসায়ী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহ হেল মাজেদ বাবু।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬২ আসনের মধ্যে মাত্র ২টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হন। এর একটি হচ্ছে ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসন। নির্বাচনে এই আসনে সংসদ নির্বাচিত হন মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। পরে তিনি পাকিস্থানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হন।
স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত ১১ টি নির্বাচনের মধ্যে চারবার জাতীয় পার্টি ও তিনবার বিএনপি,তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এই আসনে বিজয়ী হন।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে নানা টানাপোড়েন চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। অভিযোগ আছে,এলাকার প্রত্যাশিত উন্নয়নে কোনো চমক দেখাতে পারেননি ফখরুল ইমাম। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ আগামীতে এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ। তবে বাস্তবতা হচ্ছে জোটগত নির্বাচন হলে এই আসনটি ছাড় দিতে হতে পারে জাপার প্রার্থীকে।

ফখরুল ইমাম ভদ্র ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলেও এলাকার তার যোগাযোগ কম। এছাড়া জিএম কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় দূরত্ব বেড়েছে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এমপির সঙ্গেও। অথচ এক সময় রওশন এরশাদের আস্থাভাজন হিসেবেই তিনি এই আসনে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন।

মনোনয়নকে ঘিরে চরম কোন্দল ও গ্রুপিং এখন আর লুকোছাপা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। দুই দলই চাইছে আসনটিতে ভাগ বসাতে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৫৩ তম সংসদীয় আসন (ইশ্বরগঞ্জে) জিতবে তা নির্ভর করবে প্রার্থী বাছাই ও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির জাতীয় রাজনীতির সমিকরণের ওপর ।

 

বিএনএ/ শাম্মী, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ