29 C
আবহাওয়া
৪:০২ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫১ (ময়মনসিংহ-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫১ (ময়মনসিংহ-৬)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-৬ আসনের হালচাল।

ময়মনসিংহ-৬ আসন 

ময়মনসিংহ-৬ সংসদীয় আসনটি ফুলবাড়িয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৫১ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আমিরুল্ ইসলাম বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৩ হাজার ৪ শত ৩২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আমিরুল্ ইসলাম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৬শত ৯ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির  শামছ উদ্দিন আহমদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির শামছ উদ্দিন আহমদ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫ শত ৩২জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৭ হাজার ৮ শত ২৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৮ শত ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামছ উদ্দিন আহমদ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ১ শত ৩৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জি: শামস উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২লাখ ৪৩ হাজার ৯ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৭০ হাজার ৬ শত ২৩ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জি: শামস উদ্দিন বিজয়ী হন। কুলা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৫ শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৬ শত ২১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৮ শত ৪৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৭ হাজার ৬ শত ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শামছ উদ্দিন আহমদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৮ শত ৫০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৭ শত ৮১ জন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৯ শত ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের মো: আবদুর রহমান । মশাল প্রতীকে তিনি পান ৮ হাজার ১ শত ৭৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭ শত ৪০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮১ হাজার ১‘ শত ৮৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন ,ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির শামছ উদ্দীন আহমেদ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র পার্টির সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের নুরুল আলম সিদ্দিকী, তারা প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির চৌধুরী মোহাম্মদ ইস্‌হাক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোসলেম উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪০ হাজার ৪ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামছ উদ্দীন আহমেদ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩২ হাজার ৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি ,অষ্টম সংসদে স্বতন্ত্র, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৩.০০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৩০%, বিএনপি ২৮.৭৯%, জাতীয় পাটি ৩.১৬%, জামায়াত ইসলামী ২৬.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১২.৭৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬১.৪৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.৩৬%, বিএনপি ২৯.৮১% জাতীয় পাটি ৭.৯৬%, জামায়াত ইসলামী ১৬.১২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭৫% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৯৫ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৮৪%, ৪ দলীয় জোট ২৭.৭৭%, জাতীয় পার্টি ৬.৪৫%স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৪.৯৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.২৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৯.৪৯%, ৪দলীয় জোট ৩৮.৬০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৯১% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। বার্ধক্যজানিত কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন নাও চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার পুত্র ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুল হক মনোনয়ন চাইবেন। ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম মোস্তফা তপন ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক সরকার।

বিএনপির থেকে মনোনয়ন চাইবেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুল আলম ফারুক, ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শামছ উদ্দিন আহমেদের ভাতিজা মামুনুর রশিদ মামুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল করিম সরকার ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান।

জাতীয় পার্টি থেকে এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টি ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. কেআর ইসলাম। জাতীয় পার্টি থেকে তিনি একক প্রার্থী।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চান ময়মনসিংহ মহানগর জাসদ (ইনু) সভাপতি সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। কিন্তু কালপরিক্রমায় তা ধরে রাখতে পারেনি বিএনপি। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবারসহ আসনটি থেকে মোট পাঁচবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন। তিনি আওয়ামী লীগকে একটি শক্ত ভিত তৈরি করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে পারিবারিক রাজনৈতিক একটি বলয়ও তৈরি করে রেখেছেন। এই নিয়ে দলীয় কোন্দল ও বিরোধও রয়েছে। ফুলবাড়িয়া আওয়ামী লীগ এমপি গ্রুপ,ও এমপি বিরোধী গ্রুপে বিভক্ত। যা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।

একই অবস্থা বিএনপিতে। বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধ দীর্ঘদিনের হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এ রকম গ্রপিং কোন্দলে বিব্রত ও হতাশ দলের নেতাকর্মীরা।
বিরোধ নেই জাতীয় পার্টি ও জাসদে। এই দুই রাজনৈতিক দলের ভোট ব্যাংক রয়েছে। জাতীয় পার্টি ও জাসদ আওয়ামী লীগের সঙ্গেজোটবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে গেলে এই আসনটি শরিকদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া যায় না। এইক্ষেত্রে জাপা নাকি জাসদ কার ভাগ্যের শিকা ছিঁড়বে সেটি নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৫১ তম সংসদীয় আসনটিতে কে বিজয়ী হবে তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করা না করার ওপর।

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ