31 C
আবহাওয়া
২:০০ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫২ (ময়মনসিংহ-৭)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৫২ (ময়মনসিংহ-৭)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ময়মনসিংহ-৭ আসনের হালচাল।

ময়মনসিংহ-৭ আসন 

ময়মনসিংহ-৭ সংসদীয় আসনটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাল্য স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৫২ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম এ খালেক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ১ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৮ হাজার ৮ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির এম এ খালেক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ৮ শত ৩৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মাহবুব আনাম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির মাহবুব আনাম কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন মাদানী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯ হাজার ১ শত ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন মাদানী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৭ শত ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টীর আবদুল হান্নান । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৪ শত ৫৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন সরকার বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৪ শত ৬৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৫৯ হাজার ৯ শত ৯০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগে আবদুল মতিন সরকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮২ হাজার ১ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ খালেক । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৫ শত ৯২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের রেজা আলী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৬ শত ২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮ শত ২৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রেজা আলী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ডা: মাহবুবুর রহমান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৪০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান বিজয়ী হন 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ৭১ হাজার ১ শত ৮৩ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৯ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৩ শত ৬৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মো: হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫০ হাজার ৭ শত জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মো: হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা: মাহবুবুর রহমান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আজিজুল হক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মো: হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৪ হাজার ৭ শত ৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ডা: মাহবুবুর রহমান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩৬ হাজার ৪ শত ৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি , সপ্তম , অষ্টম, নবম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, এবং দশম সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ময়মনসিংহ-৭ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৭ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৩২%, বিএনপি ৩১.৯০%, জাতীয় পাটি ১৪.৩২% জামায়াত ইসলামী ১৬.৯৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৫১% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২.৯৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৮৭%, বিএনপি ২৪.৮৩% জাতীয় পাটি ২৭.০০% , জামায়াত ইসলামী ৪.৫৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৪২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.৩৫ %, ৪ দলীয় জোট ৩৫.৩৭%, জাতীয় পার্টি ১২.৮৫%স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৩% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৩৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৮.১৬ %, ৪দলীয় জোট ২৯.২২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৬২% ভোট পায়।

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।  আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার, ময়মনসিংহ জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপকমিটির নেতা নুরুল আলম মিলন পাঠান, ত্রিশাল পৌর মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ, ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা আহাম্মদ আলী আকন্দ ও সাবেক ব্যাংকার হাবিবুর রহমান।

এছাড়া ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম মোঃ সামসুদ্দীন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সমাজ সেবক ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সাবেক উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহব্বায়ক আমিনুল ইসলাম আমিন সরকার মনোনয়ন  চাইবেন।

এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসন মূলত নৌকার ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর বেশিরভাগ সময় এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচ বার, বিএনপি তিনবার ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কোন্দল, দলাদলিতে বিভক্তি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দলের এই কোন্দল ও বিভক্তি নিয়ে নেতাকর্মীরা বিব্রত ও হতাশ। মূলত কমিটি গঠন ও পদ বাণিজ্যকে নিয়েই এই কোন্দল ও বিভক্তি।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা এলাকায় তৎপর থাকলেও জাতীয় পার্টি কিংবা অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা তেমন সরব নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৫২ তম সংসদীয় আসন (ত্রিশাল) বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শাম্মী, ওজি,ওয়াইএইচ

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ