30 C
আবহাওয়া
৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ - মে ১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » যাদের যাকাত দেওয়া যাবে, যাদের যাবে না

যাদের যাকাত দেওয়া যাবে, যাদের যাবে না

যাদের যাকাত দেওয়া যাবে, যাদের যাবে না

বিএনএ, ইসলামিক ডেস্ক: প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।

কাকে যাকাত দেওয়া যায় এবং কাকে দেওয়া যায় না, এ ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোরআনে বলা হয়েছে যে ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায় কর্মী, নও মুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে যাকাত দিতে হবে। যাকাতের অর্থ বা সম্পদ বিতরণের বিষয়ে কোরআনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যাদের যাকাত দেওয়া যায়

সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী যারা যাকাত পাওয়ার উপযোগী, তারা হলেন-
১। ফকির: যার বেঁচে থাকার মতো সম্বল নেই বা খুব সামান্য। ২। মিসকিন: এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের এবং তার ওপরে নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ৩। যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকাজে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের আমিলিন বলে। ৪. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম। ৫। মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাস বা রিকাব। ৬. ঋণী ব্যক্তি যিনি যাকাতের অর্থে ঋণ পরিশোধ করতে চান। ৭. আল্লাহর পথে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি (মুজাহিদ)। ৮. বিপদগ্রস্ত মুসাফির।

যাদের দেওয়া যাবেনা 

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, যে ব্যক্তি অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপার সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্যের মালিক, তাকে যাকাত দেওয়া যায় না। এমন ব্যক্তির যাকাত গ্রহণ নিষেধ। নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীকে যাকাত দিলে আদায় হবে না।

নির্দিষ্ট আত্মীয়: কেউ তার আপন মা, বাবা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে যাকাত দিতে পারবে না। একইভাবে নিজের ছেলে, মেয়ে, নাতি ও নাতনি এবং তাদের সন্তানদের যাকাত দেওয়া যায় না। আবার স্বামী স্ত্রীকে যাকাত দিতে পারবেন না। স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবেন না।

সেবার প্রতিদান: পারিশ্রমিক হিসেবে কাউকে যাকাত দেওয়া যায় না।

কর্মচারীর মজুরি: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে যাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরি ছাড়া উপহার হিসেবে তাদের যাকাত দেওয়া যায়।

মাসয়ালা: নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, অর্থাৎ যাকাত দাতার সকল পিতৃকুল ও মাতৃকুলের সকল ঊর্ধ্বতন নারী-পুরুষকে যাকাত দেওয়া যাবে না। ঔরসজাত ছেলে- মেয়ে, নাতী- নাতনি, পরনাতি-পরনাতনি, অর্থাৎ নিজের অধস্তন সকল নারী-পুরুষকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না। এছাড়া অন্য সব দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে যাকাত দেওয়া যাবে। যেমন- ভাইবোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ি, সৎ মা-সৎ বাবা, জামাতা, পুত্রবধূ ইত্যাদি। -হেদায়া: ১/২০৬

যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নিকটাত্মীয়দের যাকাত দেওয়া উত্তম। -রদ্দুল মুহতার: ৩/২৯৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৯০, মারাকিউল ফালাহ: ৫৯৪

মাসয়ালা: যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে যাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নেসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১৫৮

মাসয়ালা: যাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন- রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে যাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য; সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়। যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসার বিল্ডিং নির্মাণ করা, ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যয় করা, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেওয়া, ওয়াজ-মাহফিলের জন্য ব্যয় করা বা এগুলোতে সহায়তা দেওয়া, মিডিয়া তথা রেডিও, টিভি চ্যানেল করা জায়েজ নয়; বরং যাকাতের টাকা তার হকদারকেই মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না। -মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক: হাদিস নং ৬৯৪৭, রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪৪

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ