18 C
আবহাওয়া
৬:১৬ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » জায়গা কিনে আদালতের অনুমতি নিয়ে বুঝে নিতে গিয়েছি

জায়গা কিনে আদালতের অনুমতি নিয়ে বুঝে নিতে গিয়েছি

জায়গা কিনে আদালতের অনুমতি নিয়ে বুঝে নিতে গিয়েছি

বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের (জেএম সেন) শতবর্ষী প্রাচীন বাড়িটি দখল করতে যাওয়া ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের দাবি, ওই জায়গা তারা কিনে নিয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে দখলে গেছেন। তারা ‘দখলদার বা ভূমিদস্যু নন’।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, আমি আইনগতভাবে এই জায়গা পেয়েছি। সেখানে আমি স্থিত থাকব। যদি সরকার মনে করে আমাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জায়গাটি নেবে। তাহলে আমরা অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা হস্তান্তর করব। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

যাত্রামোহন সেনগুপ্তকে ‘শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করে ফরহাদ বলেন, তিনি বাংলার জন্য অনেক করেছেন। রহমতগঞ্জ এলাকার আশেপাশে উনাদের অনেক সম্পত্তি ছিল। ওই জায়গাটি যদি ঐতিহাসিক হয়, তাহলে আশেপাশের ফ্ল্যাট বাড়ি কেমনে হল, তখন তো প্রতিবাদ হয় নাই। বাড়িটি যদি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হয়, তাহলে এই বাড়ির উঠান-পুকুরে কি করে ভবন উঠলো? তখন কেনো বাধা দেয়া হয়নি? আমরা ওই জায়গার জন্য ১৫ বছর ধরে আদালতে লড়েছি।

ফরহাদ চৌধুরী বলেন, উনি (রানা দাশগুপ্ত) শ্রদ্ধেয় হলেও অনেক বিষয়ে বিতর্কিত। ওই বাড়ি দখলে বাধা দিয়ে উনার কী লাভ? ব্যক্তিস্বার্থে উনি এসব কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। উনি চাচ্ছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক বাড়ি হিসেবে রক্ষা করবেন। এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটি রক্ষা করার একটা সিস্টেম আছে, আলোচনার প্রয়োজন আছে। উনি আমাদের ভূমিদস্যূ বানিয়ে জাতির সামনে হেয় করেছেন।’

ফরহাদ চৌধুরী বলেন, আপনারা আদালতে যান। উনি (রানা দাশগুপ্ত) বিচারক নন, উনি একজন ফৌজদারি অ্যাডভোকেট। আমি জানি না, উনি দেওয়ানি মামলা সম্পর্কে কতটুকু অবগত।’

রানা দাশগুপ্তকে উদ্দেশ করে ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ওই স্থানে রাজাকারপুত্র শিশুবাগ স্কুল পরিচালনা করছেন। তখন উনি কোথায় ছিলেন। আমি, আমার পরিবার, আমার বংশ কখনো জায়গা দখল করিনি। জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছে আদালত।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে বাড়িটির দখলদার ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবী এডভোকেট আরেফিন আলি বলেন, ‘২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা (নং- ১৭০২) দলিল মূলে শ্রী মিলন কান্তি সেনগুপ্তের পিতা শ্রী বীরেন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত থেকে খরিদক্রমে আমার মক্কেল এম ফরিদ উদ্দিন নিম্ন তফসিলভুক্ত (আর এস জরিপ ২০১, ৩২১) সম্পত্তি ভোগদখলকার মর্মে স্থিত হয়েছেন।’

জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তের বাড়ি রক্ষায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বুধবার (৬ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক বাড়িটি না ভাঙার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে জেলা প্রশাসনের দেওয়ানি মামলা শাখার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। আদালত ভবনটি ভাঙার ওপর একমাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা: ভাঙা যাবে না যাত্রা মোহন সেনের বাড়ি

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যে কয়জন বাঙালি ভারতবর্ষে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন, তাদের অন্যতম যাত্রা মোহন সেন, যতীন্দ্র মোহন সেন ও তার স্ত্রী নেলি সেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত জেএম-সেন হল ব্রিটিশ আমল থেকে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত রহমতগঞ্জ এলাকার যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটিতে অবস্থান করেছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলানা শওকত আলী, ড. আনসারী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, ব্যারিষ্টার আবদুল্লাহ রসুলসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।

যাত্রা মোহন সেনের পুত্র যতীন্দ্র মোহন সেনকে চট্টগ্রামের মানুষ মুকুটহীন রাজা বলে অবহিত করতেন। তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই ব্যারিস্টারি করে আয় করা অর্থে বাড়িটি নির্মাণ করেন। ১৯২২-২৩ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি পাঁচবার কলকাতার নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে যুববিদ্রোহে নাগারখানা যুদ্ধে ও সরকারি টাকা লুটের মামলায় মাস্টার দা সূর্যসেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা পরিচালনা করেন।

যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই নিঃসন্তান অবস্থায় ব্রিটিশ ভারতের রাচিতে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান তিনি। তার স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জ এলাকার বাড়িটিতে ছিলেন। ওই বছর তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। এর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে। স্বাধীনতার পর নেলি সেনগুপ্ত দেশে ফিরে দেখেন- তার বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর তিনিও কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে ১৯৭৫ সালে সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা পর শামসুদ্দিন মো. ইছহাক। এরপর থেকে তার সন্তানরা সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন।

যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও তার স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। এজন্য সরকার এই সম্পত্তিকে অর্পিতসম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ