32 C
আবহাওয়া
৩:০৩ অপরাহ্ণ - মে ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শেষ প্রহরে নবজাতকের কান্না, এগিয়ে আসলো পরী

শেষ প্রহরে নবজাতকের কান্না, এগিয়ে আসলো পরী

শেষ প্রহরে নবজাতকের কান্না, এগিয়ে আসলো পরী

বিএনএ, সাভার: কে বা কারা যেন রাতের আঁধারে রাস্তার পাশে রেখেছিল সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতক এক শিশুকে। কুয়াশা মাখা রাতের শেষ প্রহরে রক্তমাখা শরীরে জার জার হয়ে কাঁদছিল একা। নবজাতকের কান্না বিড়াল ছানার চিৎকারের মতো ভেসে যাচ্ছিল আশেপাশের বসত বাড়ির আঙিনায়। ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে “আমার কোন দোষ নেই! মা আমাকে নিয়ে যাও” এই বলে। কিন্তু শিশুটির কান্না কারও ঘরের দরজা ভেদ করে পৌঁছাতে পারেনি। অবশেষে বিড়াল ছানার চিৎকারে এগিয়ে এলো পরী! বিড়াল ছানার পরিবর্তে এসে দেখল অসহায় অভিমানী কান্না জড়িত শব্দটি মানব সন্তানের।

এই পরীটি কোন রুপকথার গল্পের পরীস্থানের পরী নয়। বাস্তব মানব জীবনের আব্দুর রশীদের স্ত্রী পরীবানু। ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা গ্রামের বাসিন্দা। নবজাতক শিশুটিকে যেখানে রেখেছিল সেই রাস্তার পাশেই পরীবানুর বাড়ি। রাতের শেষ প্রহরে মোরগের ডাকে ঘুম না ভাঙ্গলেও বিড়াল ছানার চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পরীবানুর। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে রাস্তার পাশে দেখতে পায় কুয়াশার চাদরে মোড়ানো রক্তমাখা এক নবজাতককে। শীতের ঠান্ডায় জার জার হয়ে অভিমানী কণ্ঠে কাঁদছে আর ও যেন বলছে আমার কোন দোষ নেই, মা মা আমাকে নিয়ে যাও, আমাকে একা ফেলে যেও না, শিয়াল কুকুর আমাকে খেয়ে ফেলবে, আমি বাঁচতে চাই!

সদ্য জন্ম নেয়া নবজাতককে রাতের আঁধারে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (০৪ নভেম্বর) ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা গ্রামে।

নবজাতক উদ্ধারের খবর পেয়ে শনিবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সির সাভার প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রতিনিধির একটি টিম (দল) চলে যায় ঘটনাস্থলে। কথা হয় নবজাতক উদ্ধারকারী পরীবানু সহ স্থানীয়দের সাথে। নবজাতকের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে।

সাক্ষাৎকারে পরীবানু জানান, প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই শুয়ে পড়ে। শেষ প্রহরে হঠাৎ বিড়াল ছানার চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায় পরীবানু। কখনো নবজাতকের কান্না, আবার কখনো বিড়াল ছানার মতো চিৎকার শুনতে পায়। সন্দেহের বাসা বাঁধে পরীবানুর মনে। এটা কি মানব সন্তান নাকি বিড়াল ছানা। সন্দেহ দূর করতে প্রতিবেশীদের নিয়ে চলে যায় বাড়ির সামনে রাস্তায় যেখান থেকে অসহায় অভিমানী কান্নার সুর আসছিলো। তখন রাত আনুমানিক ৩টা। সেখানে গিয়ে বিড়াল ছানার পরিবর্তে সদ্য জন্ম নেয়া রক্তমাখা ফুটফুটে কন্যা সন্তান দেখতে পায়। আঁধার রাত হলেও ফুটফুটে কন্যা সন্তানের আলোয় আলোকিত হয় রাত। সেই সাথে ওই কন্যা সন্তানের মায়ায় পড়ে যায় পরীবানু।

স্থানীয় নিঃসন্তান নজরুল ইসলাম নবজাতক উদ্ধারের খবর শুনে দৌড়ে যায় দেখতে। ২০বছর বিয়ের পরও কোন সন্তান লাভ করতে পারেনি। নিঃসন্তান নজরুল ইসলাম সন্তানের অভাব ও তার স্ত্রীর কোল ভরে দিতে কুড়িয়ে পাওয়া অসুস্থ নবজাতককে হাসপাতালে ভর্তি করেন।  বাচ্চাটির দায়িত্ব নেয়ার জন্য উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করেছেন।

ধামরাই থানাধীন কাওয়ালিপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ রাসেল মোল্লা বলেন, আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা গ্রামে একটি নবজাতককে কে যেন রাতে রাস্তায় ফেলে যায়। শিশুটির কান্না শুনে রাস্তা পাশের এক ব্যক্তি উদ্ধার করে। পরে খবর পেয়ে শিশু বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। বাচ্চাটি এখন সুস্থ আছে।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এস এম হাসান বলেন, উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ইউএনও মহোদয়। সর্বউত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিবে অতিশীঘ্রই। এই বাচ্চাটা কি করা যায়। এটা কি কোনো রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারী প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। আবার যদি নিঃসন্তান কোন দম্পতি নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত হবে।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, উদ্ধারকৃত নবজাতক সুস্থ রয়েছে। শিশুটি এখনো কারও কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড থেকে আমরা অতিশীঘ্রই নবজাতকের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিব।

বিএনএ/ ইমরান খান, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ