37 C
আবহাওয়া
৭:০২ অপরাহ্ণ - মে ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মোছলেম উদ্দিন আহমদ স্মরণে

মোছলেম উদ্দিন আহমদ স্মরণে

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোছলেম উদ্দিন আহমদ

।।নুরুল আবছার চৌধুরী।।

পৃথিবীতে কিছু মানুষ এমনও ছিলেন যারা ইহকাল থেকে প্রস্থান করলেও যুগ যুগ ধরে তাদের আবেদন কমে না। সভ্যতায় রয়ে যায় তাদের কর্মের ছাপ। দেহের মৃত্যু হলেও কর্মের মৃত্যু হয়না তাদের। মৃত্যুর পরেও এসব কীর্তিমান মানুষের অমর অবদানের কথা মানুষ স্মরণ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোছলেম উদ্দিন আহমদও ছিলেন তেমনই একজন। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। গত বছরের এ দিনে ৭৫ বছর বয়সে দূরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন চট্টগ্রামের এই জনপ্রিয় রাজনীতিক।

১৯৪৯ সালের ২ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কদুরখীল গ্রামের কাজী মোহাম্মদ নকী বাড়ীর সন্তান মোছলেম উদ্দিনের পিতার নাম মরহুম মোশাররফ উদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম মরহুমা রওশন আরা বেগম। জীবদ্দশায় তিনি তার স্ত্রী শিরিন আহমদ ও চার মেয়ে নিয়ে লালখান বাজারের রওশন ইমন টাওয়ারে বসবাস করতেন।

চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি কর্মাস কলেজ থেকে এইচএসসি ও গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন তিনি।

মুসলিম হাইস্কুলে ছাত্রাবস্থায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে সংগঠনের সকল কর্মকাণ্ডে কার্যকর অংশগ্রহণের কারনে অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ ও নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন। ’৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৮ এর গণজাগরণ, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা ছিলো তার। বণ্যাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পরতে কীর্তি অধ্যায় রচনা করেছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সেই দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গরূপে অর্পিত হয় তার ওপর। তৎকালে যুবলীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রতম কমিটির সাধারণ সম্পাদক (মৌলভী সৈয়দ-মোছলেম উদ্দিন) দায়িত্ব, পরবর্তীতে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। ৮৬ সালে চন্দনাইশের বরকলে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক (বাবু-মোছলেম), পরবর্তীতে ২০১২ সালে মরহুম জননেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর পর সভাপতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। মোছলেম উদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের এই সৈনিক স্বাধীনতা সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন বিধায় চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা তার সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘সমগ্র চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা তখন মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। বাঙালিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি, বল্লম, তীর-ধনুক নিয়ে, এমনকি মরিচের গুড়া নিয়েও নিজ এলাকার রাস্তায়, বাসার ছাদে দালানের কোণায়, অবস্থান নিয়েছিলেন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য। অসীম মনোবল ও সাহসী এসব মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। এ প্রতিরোধ যুদ্ধে চট্টগ্রামের নারীরাও সম্পৃক্ত ছিলেন। ওইসময় পাকিস্তানি কমান্ডোদের অতর্কিত আক্রমনে জামালখান এলাকার চেরাগী পাহার মোড়ে শহিদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপক, জাফর ও বদরুজ্জামান। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে এরকম একটি পাকিস্তানি কমান্ডো বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও মো. ইউনুস। দীর্ঘ আড়াইমাস চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ছিলেন তারা। কারাবন্দি থাকাকালীন তাদের মাথায় এসেছিলো এক দুঃসাহসিক চিন্তা। কীভাবে কারাগার থেকে পালানো যায়? তারা পাগল সেজে কারাগার থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কারাগার থেকে পালানোর পর আবারো দেশকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তারা।

তিনি শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ কিংবা সমাজসেবক নন। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন একজন সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী। ছাত্রজীবন থেকে সাহিত্য চর্চার আগ্রহ ছিলো তার। এজন্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন সাহিত্য-শিল্পনুরাগীদের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। ’৭০ এর দশকে ‘জয় বাংলা’ নামে একটি সাময়িকী তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সাহসী ঠিকানার সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। যদিও ওইসময় মৃত্যুরোগ বাসা বেঁধেছিলো তার শরীরে তারপরও দায়িত্ব পালনে বিমুখ হননি তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার আসনে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন তিনি।

তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে দিনব্যাপী দোয়া-মাহফিল, পবিত্র কোরআনে খতম ও তার স্মরণে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের প্রথমার্ধে কচিকাঁচার মেলা করার সুবাদে জেলা কচিকাঁচার মেলার সংগঠক হিসাবে উনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়।

লেখক: সম্পাদক, চাটগাঁর সংবাদ এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

Loading


শিরোনাম বিএনএ