30 C
আবহাওয়া
৬:২৯ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা: ভাঙা যাবে না যাত্রা মোহন সেনের বাড়ি

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা: ভাঙা যাবে না যাত্রা মোহন সেনের বাড়ি

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা: ভাঙা যাবে না যাত্রা মোহন সেনের বাড়ি

বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রা মোহন সেনগুপ্তের (জেএম সেন) শতবর্ষী প্রাচীন বাড়ি ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ভবনটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করার কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সচিবসহ মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) হাইকোর্ট করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।

এর আগে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতা যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি (শিশুবাগ স্কুল ভবন) ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আলম চৌধুরী বাদী হয়ে রিট করেন।

রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জ এলাকার শিশুবাগ স্কুলের ভবন ভাঙা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার (৪ জানুয়ারি) সকালে বাড়িটি দখলে নিতে যায় একটি মহল। এসময় সেখানে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একজন নাজিরের উপস্থিতিতে শত বছরের পুরনো ভবনটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু করা হয়। পরে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে ভবনটি সিলগালা করে দেয় প্রশাসন।

স্থানীয়দের দাবি- স্কুলটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি। যা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রা মোহন সেনগুপ্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যে কয়জন বাঙালি ভারতবর্ষে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন, তাদের অন্যতম যাত্রা মোহন সেন, যতীন্দ্র মোহন সেন ও তার স্ত্রী নেলি সেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত জেএম-সেন হল ব্রিটিশ আমল থেকে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত রহমতগঞ্জ এলাকার যাত্রামোহন সেনগুপ্তের বাড়িটিতে অবস্থান করেছেন মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, মৌলানা শওকত আলী, ড. আনসারী, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, ব্যারিষ্টার আবদুল্লাহ রসুলসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।

যাত্রা মোহন সেনের পুত্র যতীন্দ্র মোহন সেনকে চট্টগ্রামের মানুষ মুকুটহীন রাজা বলে অবহিত করতেন। তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই ব্যারিস্টারি করে আয় করা অর্থে বাড়িটি নির্মাণ করেন। ১৯২২-২৩ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি পাঁচবার কলকাতার নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে যুববিদ্রোহে নাগারখানা যুদ্ধে ও সরকারি টাকা লুটের মামলায় মাস্টার দা সূর্যসেন, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর হয়ে মামলা পরিচালনা করেন।

যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের নেতা। ১৯৩৩ সালের ২৩ জুলাই নিঃসন্তান অবস্থায় ব্রিটিশ ভারতের রাচিতে কারাবন্দি অবস্থায় মারা যান তিনি। তার স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রহমতগঞ্জ এলাকার বাড়িটিতে ছিলেন। ওই বছর তিনি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে চিকিৎসার জন্য সেখানে যান। এর মধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এরপর তিনি ভারতে চলে গেলে পাকিস্তান সরকার সেটিকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করে। স্বাধীনতার পর নেলি সেনগুপ্ত দেশে ফিরে দেখেন- তার বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর তিনিও কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে ১৯৭৫ সালে সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে সেই বাড়িতে ‘শিশুবাগ’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা পর শামসুদ্দিন মো. ইছহাক। এরপর থেকে তার সন্তানরা সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন।

যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত ও তার স্ত্রী নেলি সেনগুপ্ত নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। এজন্য সরকার এই সম্পত্তিকে অর্পিতসম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ