26 C
আবহাওয়া
৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ - মে ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দেশে ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি ও টাকা পাচারের শঙ্কা!

দেশে ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি ও টাকা পাচারের শঙ্কা!


বিএনএ,ডেস্ক : গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৬ গুণ হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আদালতে স্থগিত থাকা, অবলোপন করা ও পুনঃ তফসিলি করা ঋণসহ বিপর্যন্ত ঋণের মোট পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। ঋণের ভারে অনেক ব্যাংক দেওলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে রাজস্ব ভান্ডারে টান পড়েছে।

YouTube player

এই অবস্থায় খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে এবং নতুন ঋণখেলাপি হওয়া ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তখনই খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কোনো গ্রুপভুক্ত পরিচালক, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলো খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে বড় ছাড় পাবে।

আগের নিয়মে কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বা কোনো ব্যক্তি খেলাপি হলে ওই গ্রুপের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নতুন ঋণ পেত না। খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নতুন ঋণ নিতে হতো। এখন থেকে কোনো গ্রুপের কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বা পরিচালক খেলাপি হলেও ওই গ্রুপের খেলাপি কোম্পানি, পরিচালক বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা ব্যাংক ও ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে নতুন ঋণ নিতে পারবে।

এ বিষয়ে গত ৩ মার্চ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

এটি খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উলটো যাত্রা। এতে খেলাপি ঋণ আদায় কমে যাবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি শনাক্ত হবে কম। একই সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।

মূলত বড় ঋণখেলাপিদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কীনা তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরছিল, ঠিক তখনই এমন সিদ্ধান্ত খেলাপি ঋণের তালিকা আরও দীর্ঘ ও মোটা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত গ্রুপগুলোর জন্য ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। কারণ, বিদ্যমান নীতির কারণে এখন গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত খেলাপি হয় না, হলেও তা দ্রুত নবায়ন করে ফেলে। কারণ, গ্রুপের একটি কোম্পানি খেলাপি হলে একই গ্রুপের অন্য কোনো কোম্পানি নতুন ঋণ পাবে না। ফলে তাদের পুরো ব্যবসা আটকে যেতে পারে। এ কারণে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত খেলাপি হয় না। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারের ফলে কোনো গ্রুপের কোনো কোম্পানি খেলাপি হলেও ওই গ্রুপের অন্য কোম্পানিগুলো নিয়মিতভাবেই নতুন ঋণ পাবে। ফলে গ্রুপের একটি কোম্পানি খেলাপি হলেও এতে কোনো সমস্যা হবে না।

যেসব গ্রুপ অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা কোনো একটি ছোট বা কম গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিকে খেলাপি করে ওই ঋণ অন্য খাতে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে নতুন ঋণও নিতে পারবে। এতে ঋণখেলাপি কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি গ্রুপের মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ আরও বেড়ে যাবে। জনগণের আমানত নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার প্রবণতাও বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে- কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকুলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনোরূপ নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করবে না। তবে একই আইনের অন্য একটি ধারার বিধান অনুসারে পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমতে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা না হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে, তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি হওয়ার কারণে ওই গ্রুপভুক্ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না। এরূপ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ঋণ সুবিধা দেওয়া যাবে মর্মে উল্লে­খ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী  বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করা কঠিন। শক্তিশালী গোষ্ঠীটি আইন পরিবর্তন করাতে সক্ষম হয়েছে। এখন তারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি নয়—এটা প্রমাণ করে ঋণও বের করে ফেলবে। এর ফলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা ম্লান হয়ে যাবে। গোষ্ঠীটির ক্ষমতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সব ক্ষেত্রে। এতে আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ