28 C
আবহাওয়া
৩:৪৯ অপরাহ্ণ - মে ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৩ (পটুয়াখালী-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১১৩ (পটুয়াখালী-৩)


বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পটুয়াখালী-৩ আসনের হালচাল।

পটুয়াখালী-৩ আসন

পটুয়াখালী-৩ সংসদীয় আসনটি দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১১৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৯ শত ৮৩ জন। নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৭শত ৫৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল বাতেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ২শত ৪৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শাহজাহান খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির শাহজাহান খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৬ হাজার ১ শত ১৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৬ শত ৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহজাহান খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ২ শত ৮১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী হন 

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩ শত ৫১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ১ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহজাহান খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৩ শত ১০ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের গোলাম মাওলা রনি বিজয়ী হন 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৭ শত ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ২ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মাওলা রনী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শাহজাহান খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৪ শত ২৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৮ শত ২৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬ শত ৩৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮ শত ৪০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফ এর এ.ওয়াই. এম কামরুল ইসলাম। টেলিভিশন প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৩ হাজার ১ শত ৫ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এস এম শাহজাদা বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৬ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫ শত ৯৯ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এস এম শাহজাদা, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির গোলাম মাওলা রনি, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কামাল খান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম শাহজাদা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১৭ হাজার ২ শত ৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কামাল খান। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান ৯ হাজার ৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় পটুয়াখালী-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। বিএনপি বিজয়ী হয় শুধুমাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পটুয়াখালী-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪১.৭১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৪২ %, বিএনপি ৭.৯৬%, জাতীয় পার্টি ১.৯৭% , জামায়াতে ইসলামী ২.০৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪২.৬২% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৪৪%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৪৪%, বিএনপি ৪৬.৪২%, জাতীয় পাটি ০.৪০%, জামায়াতে ইসলামী ১.৭০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.০৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.০৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৭৯%, ৪দলীয় জোট ৪৭.২৬%, জাতীয় পার্টি ১৬.৭৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.২% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬০.৮৩%, ৪দলীয় জোট ৩১.১৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৮.০৪% ভোট পায়।

পটুয়াখালী-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা তার মামা। তিনি মামার জোরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পান এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত সাড়ে ৪ বছরেও দলের মধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি শাহজাদা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকলেও তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদার রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চায় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেনের একমাত্র ছেলে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আ স ম জাওয়াদ সুজন, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবুল হোসেন আজাদ। আরো মনোনয়ন চাইবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো.ফখরুল ইসলাম মুকুল, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক কামরান শাহিদ প্রিন্স মহব্বত।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হাসান মামুন। তবে হাসান মামুনের সাজানো ঘর ভেঙে সংসার গড়তে পারেন গণ পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর অথবা একাদশ সংসদের ধানের শীষের প্রার্থী আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। সম্প্রতি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিএনপি ঘরনার নুরের গোপন মিটিং এবং ৪শত কোটি টাকা গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি এই বির্তক থেকে দূরে রাখতে নুরুল হক নুরকে মনোনয়ন নাও দিতে পারে।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৩ আসন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে এই আসন। কিন্তু আগামী নির্বাচনের আগে ভাবনায় পড়তে হয়েছে দলটিকে। তাদের কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্যের যোগাযোগ কম।

আওয়ামী লীগে জনপ্রিয় প্রার্থী সংকটকে কাছে লাগিয়ে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে চাইবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১১৩ তম পটুয়াখালী- ৩ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের সাম্রাজ্যের পতন হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ