31 C
আবহাওয়া
১:২৯ পূর্বাহ্ণ - মে ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : রংপুর-৪

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : রংপুর-৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল

বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ(১২তম) জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ(৪ এপ্রিল ২০২৩) থাকছে রংপুর-৪ আসনের  হালচাল।

রংপুর-৪ সংসদীয় আসন

রংপুর-৪ সংসদীয় আসনটি পীরগাছা এবং কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২২ নাম্বার আসন।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-২২ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে ভোটার ছিল ৯৯ হাজার ৫ শত ৮০ জন। ভোট প্রদান করেন ৪৬ হাজার ৪১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তোফাজ্জল হোসেন সরকার  বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৬ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান সরকার । তিনি পান ৫ হাজার ৭ শত ৯ ভোট।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-১১ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬ শত ৮১  জন। ভোট প্রদান করেন ৫১ হাজার ৫ শত ৫৭ জন। বিএনপির খন্দকার গোলাম মোস্তফা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ৮ শত ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের  হামিদুজ্জামান। তিনি পান ১৫ হাজার  ৩ শত ৩১ ভোট।

তৃতীয় জাতীয়  সংসদ নির্বাচন

১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয়  সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১১ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, রংপুর-৪। এই নির্বাচনের আগে নতুন ভোটার তালিকা প্রনয়ন করা হয়নি। আগের সংসদের হিসাবে  ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬ শত ৮১   জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১১ হাজার ২ শত ৬৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক  বিজয়ী হন। তিনি পান ৩৬ হাজার ৭শত ১১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উদ্দিন ভরসা ।  তিনি পান ২৯ হাজার ৭ শত ৫৪ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন

১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শাহ আলম বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৬শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আহাদ সরকার। তিনি পান ২৪ হাজার ৪২ ভোট।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন

১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ আসনে ভোটার  ছিলেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৩ শত ৬৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৬০  হাজার ৭ শত ৭৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির  শাহ আলম বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ২ শত ৫৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শাহ আব্দুর রাজ্জাক। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৩ শত ২৫ ভোট।

৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল শুধু নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ফলে রংপুর-৪ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। ফলে ৬ষ্ট জাতীয় সংদ নির্বাচনে এই আসনে কেউ প্রতিনিধিত্ব করেনি।! বিরোধী দলের অসহযোগ  আন্দোলনের মুখে বিএনপি  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ  হওয়ার পরপরই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন!

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৬ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮২ হাজার ২ শত ৫১ জন।  নির্বাচনে জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৩ শত ৭৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মহসীন আলী বেঙ্গল। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ৭৬  ভোট।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ২ শত ৭ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ১ শত ৪৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ৬ শত ৩১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৮ শত ২৫ ভোট।

নবম জাতীয় সংসদ  নির্বাচন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ৭১ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৪ শত ৩৬ জন। নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ১৮ হাজার ৯ শত ৫০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ৮ শত ৪২ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯ জন ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২০ হাজার ১ শত ৫৪জন । নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সী বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫ হাজার ৯ শত ৮৬ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রংপুর- ৪ আসনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৯ শত ৯০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ২৩  হাজার ৪ শত ৭৩  জন।  প্রার্থী ছিলেন ৬ জন।

 

নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সী,ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির এমদাদুল হক ভরসা, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম, মই প্রতীকে বাসদের সাদেকআলী  গোলাপফুল প্রতীকে জাকের পার্টির আঞ্জুমান আরা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বদিউজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এমদাদুল হক ভরসা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪ হাজার ১ শত ৭৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

 

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রংপুর-২ আসনে প্রথম, তৃতীয়, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় সংসদে বিএনপি,  চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম সংসদে জাতীয় পার্টির  প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর রংপুর-৪ আসনের ৫টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের চেষ্ঠা করেছে।

 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৪ আসনে ভোট প্রদান করেন ৪৬.২৪ % ভোটার। আওয়ামী লীগ ৮১.৮১%, ন্যাপ মোজাফফর ৩.২৬%, অন্যান্য পায় ১৪.৯২% ভোট পায়।

 

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৪.৪৬ %, বিএনপি ১৩.১৮ %, জাতীয় পার্টি ৪৭.৪৩%, জামায়াত ১৩.৪% অন্যান্য দল  ১.৫৪ %  ভোট পায়।

 

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে  আওয়ামী লীগ ২১.৯৯%, বিএনপি ১৬.৯৬% , জাতীয় পার্টি ৪৬.৩০%, জামায়াত ৫.২১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৯.৫৪% ভোট পায়।

 

 

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৫৮ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে  আওয়ামী লীগ ২৭.০৪%, ৪ দলীয় জোট ৩৪.১৯%, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট ৩৮.১৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৫৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৩৩%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৪০.৬৮%, ৪ দলীয় জোট  ৩৫.১৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ২৪.১৫% ভোট পায়।

 

একাদশ সংসদে রংপুর ৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিত্ব করছে। এ আসনের সংসদ সংসদ সদস্য বর্তমান সরকারের বানিজ্যমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থাও আওয়ামী লীগের সমানে সমান। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত নয়। তবে জামায়াত ইসলামীর প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে. যা বিএনপিতেই  যাবে। সেদিক থেকে বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদের ২২ নম্বর আসন রংপুর-৪ এ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন, এসজিএন

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ