31 C
আবহাওয়া
১:০৯ পূর্বাহ্ণ - মে ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৫ (শেরপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৪৫ (শেরপুর-৩)


বিএনএ ডেস্ক : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে শেরপুর-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

শেরপুর-৩ আসন 

শেরপুর-৩ সংসদীয় আসনটি শ্রীবরদী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৪৫তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ডা: সেরাজুল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৯ শত ৩১ জন।  ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭ শত ৬ জন।  নির্বাচনে বিএনপির ডা: সেরাজুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৭ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবদুল হালিম।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৬শত ৮৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির  মাহমুদুল হক রুবেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির  মাহমুদুল হক রুবেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এম এ বারী বিজয়ী হন 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৪ শত ৫০ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ বারী বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৯ শত ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৮৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ১৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৭শত ৮৫ভোট।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এম এ বারী।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৩ শত  ৯৩ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২ শত ৮৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৫ শত ২২ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ৬ শত ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৫ হাজার ৭শত ৫৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক নির্বাচিত

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৮ শত  ৯৫ জন।  ভোট প্রদান করেন ৭৭ হাজার ৪ শত ৮৯ জন।  নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৬শত ৫০ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মো: খোরশেদ আলম। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫ হাজার ৮ শত ৬৪ ভোট।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।  নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫ শত ২০ জন।  ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭২ হাজার ৪ শত  ৮০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আবু নাছের এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুস সাত্তার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক বিজয়ী হন।  নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৫১ হাজার ৯ শত ৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাহমুদুল হক রুবেল।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১২ হাজার ৪শত ৯১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে  আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।  তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর শেরপুর -৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেরপুর -৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৫.৭৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৪৭%, বিএনপি ৩৪.৫১%, জাতীয় পাটি ৯.৫২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৪.০৫%  ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.৯৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৯৯%, বিএনপি ৩০.২১%, জাতীয় পাটি ১৯.৭৭%, জামায়াতে ইসলামী ৫.১৯ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৮.৮৪%  ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.২১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৮০%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.৭৫%, জাতীয় পার্টি ১৪.০২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য  ৪.৪৩%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৯.৩২ %, ৪দলীয় জোট ৩০.৪১%,  স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.২৭%  ভোট পায়।

শেরপুর -৩ (শ্রীবরদী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ কে এম ফজলুল হক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে যে নামটি সর্বাগ্রে শোনা যাচ্ছে, তিনি হচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের নায়ক রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। পরিচিতি ও ক্লিন ইমেজের কারণে তাঁর রয়েছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা।

এছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম লিটন, শ্রীবরদী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী লাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবু ছালেহ নুরুল ইসলাম হিরু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফী জুবেরী, প্রয়াত সংসদ সদস্য এম এ বারীর ছেলে মহসীনুল বারী রুমি, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ ডি এম শহিদুল ইসলাম, জেলা মহিলা লীগের সম্পাদিকা নাছরিন বেগম ফাতেমা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান রাজা।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন, জেলা কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেল।  বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা, শ্রীবরদীর সন্তান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এ কে এম আমিনুল হক ওরফে আবুল খায়ের এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দুইবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা। এ ছাড়া শ্রীবরদী উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুজ্জামান বাদল দলগত না হলেও জোট থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।

জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় যুব সংহতি নেতা আবু নাসের বাদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেরপুর -৩ (শ্রীবরদী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা) আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের একক ঘাঁটি নয়।  আওয়ামী লীগের এ কে এম ফজলুল হক, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া গত ১৫ বছর ধরে টানা এই আসনটি দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। তবে দলটিতে ব্যাপক দলীয় কোন্দল রয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত নয়। রয়েছে গ্রুপিংও। তবে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৪৫ তম সংসদীয় আসন শেরপুর -৩ শ্রীবরদী এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে ।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা,ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ