36 C
আবহাওয়া
৯:০৭ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় ৪ লাখ মুসল্লি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়ায় ৪ লাখ মুসল্লি

শোলাকিয়া

বিএনএ, কিশোরগঞ্জ: দু বছর পর আবারও দেশের ‘সবচেয়ে বড়’ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে শোলাকিয়া মাঠে ছিল মুসল্লিদের ঢল। এবারের জামাতে প্রায় চার লাখ মুসল্লি ঈদুল ফিতরের নামাজের অংশ নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা।

মঙ্গলবার (৩ মে) সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদুল ফিতরের ১৯৫তম জামাতে ইমামতি করেন বড়বাজার মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুল রব। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

রাত থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে মুসল্লিরা শহরে প্রবেশ করতে থাকেন। ভোরে হাজার হাজার মুসল্লির পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের রাস্তাঘাট। কেউ গাড়িতে চড়ে কেউবা পায়ে হেঁটে জামাতে অংশ নিতে আসেন। সকাল ৯টার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শোলাকিয়া মাঠ। কড়া নিরাপত্তার মধ‌্যে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ করে জামাতে অংশ নেন। দুই বছর পর শোলাকিয়ায় জামাত হওয়ায় বহু মুসল্লি মাঠের আশপাশের রাস্তাগুলোতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।

২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়। দু বছর পর জামাত হওয়ায় এবার আরও বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুটি ওয়াচ টাওয়ারে স্নাইপিং রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে র‌্যাব সদস্যরা। বাকি চারটি ওয়াচ টাওয়ারে ছিলেন পুলিশ সদস‌্যরা। নজরদারিতে আকাশে ওড়ে পুলিশের বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ড্রোন। মোতায়েন ছিল মাইন সুইপিং ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল, পুরো মাঠ ও আশপাশের এলাকা ছিল সিসি ক্যামরার নজরদারিতে।

রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ছয়টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি গুলি ছুড়ে নামাজ শুরুর সংকেত দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘সকাল থেকেই পুরো মাঠ আবার তল্লাশি করা হয়। শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে আমাদের নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ছিল শোলাকিয়ায়। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। আমরা খুব সন্তুষ্ট এত বড় একটি জামাত নির্বিঘ্নে শেষ করতে পেরে।’

ঈদের জামাতকে ঘিরে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। রাস্তার দু পাশে টাঙানো হয় রঙবেরঙের পতাকা ও ব্যানার। মুসল্লিদের সুবিধায় পুরো মাঠ ও আশপাশে খাবার পানির ব্যবস্থা রাখে পৌর কর্তৃপক্ষ। মাঠে তৎপর ছিল স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে স্কাউট সদস্যরা। সব মিলিয়ে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় মুখর ছিল গোটা শোলাকিয়া মাঠ। সকালে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জে আসেন।

জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, গত দু বছর করোনা মহামারির কারণে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত হয়নি। এ জন্য মুসল্লিদের মনে একটি আক্ষেপ ছিল। আজ লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে শোলাকিয়া মাঠ আবারও নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সবার সার্বিক সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উপমহাদেশের একটি বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।

বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ