25 C
আবহাওয়া
৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ - মে ৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বঙ্গবন্ধু ইজতেমার জন্য ১৬০ একর জমি দিয়েছিলেন

বঙ্গবন্ধু ইজতেমার জন্য ১৬০ একর জমি দিয়েছিলেন


শামীমা চৌধুরী শাম্মী

বিএনএ : বাংলাদেশের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে প্রতি বছর তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত কোন তারিখ না থাকলেও শীত মৌসুমে অনুষ্ঠিত এই ইজতেমা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ। সবচেয়ে বড় ধর্মীয় জমায়েত হজ্বের পর এটি হচ্ছে মুসলমানদের দীর্ঘ ও বড় জমায়েত। লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে অংশ নেন, যাদের মধ্যে বিদেশীদের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। এর গোড়াপত্তন হয় ভারতে, কিন্তু পরবর্তীতে প্রায় অর্ধ শতকের বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে হয়ে আসছে। কীভাবে এই তবলীগ বাংলাদেশে আগমন হয়েছে? প্রথম কোথায় কীভবে তবলীগ জামায়েত শুরু হয়েছিল?

অনুসন্ধানে জানা যায়, “১৯২০ সালের দিকে যখন এটি শুরু হয়েছিল তখন এটি একটি আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল ভারতে। তখন হিন্দুদের মধ্যে একটি সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। হিন্দু ধর্ম থেকে যারা অন্য ধর্মে চলে যাচ্ছিল তাদেরকে আবারো হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা ভারতবর্ষে বিভিন্ন প্রদেশে শুরু হয়।

“১৯২৬ সালে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহঃ) ভারতের উত্তর প্রদেশের মেওয়াত এলাকায় তাবলীগী আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেন এবং একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমার আয়োজন করেন। কালক্রমে তাবলীগ সমগ্র উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করে এবং উপমহাদেশের বাহিরেও এর প্রভাব পড়ে। তখন মুসলমানদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তখন দেওবন্দ কেন্দ্রীক মুসলমানেরা চিন্তা করলেন মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে আরো সচেতন করে তুলতে হবে। এটাকে আন্দোলন বলা হয় এই অর্থে যখন একটি গোষ্ঠী অনেক লোক নিয়ে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সংগঠিত করে তখন সেটি আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল তখন ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ শাসন করছে। তাবলীগ জামাত কখনোই নিজেদেরকে ব্রিটিশ বিরোধী হিসেবে প্রচার করতে চায়নি।

বাংলাদেশে এর সূত্রপাত তবলীগ জামায়ায়াতের শুরু হয় চট্টগ্রামে। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে চট্টগ্রামের সমুদ্রবন্দর দিয়ে হজ্বে যাওয়ার জন্য মানুষ পাহাড়তলী হজ্ব ক্যাম্পে জড়ো হতেন, আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল আঞ্চলিক ইজতেমার প্রক্রিয়া। যদিও এর পরিসর ছিল ছোট।

ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং গবেষক ড. আব্দুর রশিদের মতে “১৯৪৬ সালে বাংলাদেশে ঢাকার রমনা পার্কের কাছে কাকরাইল মসজিদ – যেটা সে সময় মালওয়ালি মসজিদ নামে পরিচিত ছিল – সেখানে এই সম্মেলনটা হয়। এরপরে হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে”।

১৯৪৭ সালে ভারত- পাকিস্তান স্বাধীন দুটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান – এ তিনটি অঞ্চলে মুসলমানদের অবস্থান সাপেক্ষে তাবলীগের তিনটি কেন্দ্র স্থাপিত হয়”।

বাংলাদেশে প্রথম তাবলীগের জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন তাবলীগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ। ভারতের বাহিরে বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচারের কাজ করছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। ভারত এবং পাকিস্তান দুটি আলাদা দেশ হওয়ার পর মোহাম্মদ ইউসুফ দুই দেশেই জামাত পাঠানো শুরু করলেন ইজতেমা আয়োজনের জন্য। তবে তখন ছোট আকারে ইজতেমা হত।
বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিল, তখন ১৯৬৫ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে একটি জামাত আসে। এখন যেভাবে বিদেশ থেকে প্রচুর মুসলমান ইজতেমায় অংশ নেন, সেই সময়ে অবশ্য অন্যান্য দেশ থেকে আসেনি কোন তাবলীগ মুসলমান। “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আশেপাশের গ্রামের মানুষই উপস্থিত ছিলেন। তাবলীগের জমায়েতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকার কারণে এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে ইজতেমা হয় টঙ্গীর মনসুর জুট মিলের কাছে। এর পরের বছর ঠিক করা হয় ইজতেমা হবে টঙ্গীর তুরাগ নদের কাছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের স্থপতি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টঙ্গীতেই ১৬০ একর জমি নির্ধারণ করে দেন ইজতেমার জন্য। তখন থেকে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমার ধারণা শুরু হয়েছিল ভারতে। ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ইজতেমা হতো। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি ভারত, পাকিস্তান বা অন্য কোন দেশে না হয়ে বাংলাদেশেই স্থায়ী হয়েছে। এর একটা কারণ ছিল সে সময়ে বাংলাদেশের ভিসা পাওয়া সহজ ছিল। ইজতেমার নামে কেউ ভিসা আবেদন করলে কেউ ফেরত যেত না। তা ছাড়া তবলীগ অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রতিটি সরকারের পৃষ্টেপাষকতা পেয়েছে। তাবলীগের জমায়েত বাংলাদেশে শুরু থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা যতটা পেয়েছে ততটা ভারত বা অন্য কোথাও পায়নি। এছাড়া সবচেয়ে কম খরচে মানুষ বাংলাদেশে আসতে পারতো।

তাবলীগের ইজতেমা যে বিশ্বের অন্য কোথাও হচ্ছে না তা নয়। পাকিস্তানের রাইবেন্ড এবং ভারতের ভোপালে বড় আকারে ইজতেমা হয় বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমার ঠিক আগে ও পরে।

তবে যে সংখ্যায় বিদেশীরা বাংলাদেশের ইজতেমায় আসেন, তাতে করে তুরাগ তীরের ইজতেমাই ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষক এবং লেখক একেএম খাদেমুল হক বলেন যে দুটো কারণে বিশ্ব ইজতেমার স্থায়ী ঠিকানা বাংলাদেশে হয়েছে। “একটি বিশ্ব রাজনীতির মেরুকরণ। আরেকটি তাবলীগ জামাতের যে আন্দোলন সেটা পুরো দক্ষিণ এশিয়া-কেন্দ্রীক। যদিও ভারতে এর শুরু কিন্তু ভারতে মুসলিম-প্রধান দেশ না হওয়ার কারণে অনেক দেশের মুসলিমরা সেদেশে যেতে কমফোর্ট ফিল করেননি। আবার পাকিস্তানকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে।”

ভারতের কিছু স্থানে তখনো মুসলমানদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি মতবিরোধ ছিল। সে তুলনায় বাংলাদেশে মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ছিল, যাকে একটা নিরাপদ পরিবেশ বলে মনে করেছিলেন তারা। ভারত এবং পাকিস্তান – এই দুটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তুলনামূলক নিরপেক্ষ একটা স্থান ছিল।

কারণ হিসেবে বলা হয়, রাজনৈতিক কারণে তখন ভারতের নাগরিকরা যেমন সহজে পাকিস্তানে যেতে পারতেন না, তেমনি পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভারতে পাওয়া ছিল কঠিন একটি বিষয়। ফলে বাংলাদেশই ছিল ওই দেশ যেখানে সহজে সবাই আসা-যাওয়া করতে পারতেন বলে গবেষকরা মনে করেন।

বিএনএনিউজ/এইচ.এম/ হাসনা

Loading


শিরোনাম বিএনএ