19 C
আবহাওয়া
১:৫৪ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দৃঢ়ভাবে বলেছেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ যেখানে প্রতিটি মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকবে এবং দেশ বিশ্ব পরিমন্ডলে পিছিয়ে থাকবে না।

শনিবার(৩১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আগামীকাল ১ জানুয়ারি সারাদেশে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপিত হবে।

তিনি বলেন, সমস্ত গ্রামসহ সারাদেশে প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকবে এবং সরকার এ জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মানে প্রতিটি নাগরিক হবে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন। প্রতিটি ছেলে মেয়ে কম্পিউটার টেকনোলজি এখন থেকে শিখছে এবং আরো এগিয়ে যাবে। আমাদের পুরো জনগোষ্ঠীই হবে প্রযুক্তি জ্ঞানে স্মার্ট। বিশ্ব থেকে কোন কিছুতেই পিছিয়ে থাকবেনা। নিশ্চয়ই আমরা পারবো।

তিনি বলেন, আমাদের লেখাপড়া, শিক্ষা, এ্যাডুকেশন, ই-বিজনেস, ই-ইকোনমি, ই-গভার্নেন্স সবকিছুই প্রযুক্ত জ্ঞান সম্পন্ন হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই-১ উৎক্ষেপন করা হয়েছে এরপর হবে স্যাটেলাইট-২। সেটাও আমরা করবো। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এসব সময় দ্বীপাঞ্চল থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গাতেই আমরা ব্রডব্যান্ড অনলাইনে কাজ করার প্রযুক্তি নিয়ে যাব। একবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হবে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিচ্ছি।

তাঁর সরকার ২০২০ সালে জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের সময় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে কাজেই বাংলাদেশকে এখন আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারেনা। বাংলাদেশ বিশ্বে তার একটা স্থান করে নিয়েছে। আর ২০৪১ এর বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ, যেটা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সরকার জনগণের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অনেক দিক থেকে কঠোরতা আরোপ করলেও শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তকের বই ছাপানোর ক্ষেত্রে কোনো আপোস করেনি।

শিক্ষার জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি উল্লেখ করেন, দেশের শিশুদের আন্তরিকতার সঙ্গে গড়ে তুলতে পারলে বিশ্বের কোনো শক্তি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ঠেকাতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ঢালাও সমালোচকদের চোখ থাকতেও দেশের উন্নয়ন তারা দেখতে পান না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদিও এত কাজ করার পরেও কিছু লোকের মন ভরে না। তাতেও তারা বলবে আমরা নাকি কিছুই করি নাই। কিছুই করি নাই (যারা বলে) শ্রেণী টা চোখ থাকতেও দেখে না। দৃষ্টি থাকতেও তারা অন্ধ। তারা দেখবেই না।’

বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই। ‘নাই’ ‘নাই’ শুনবো না

তিনি বলেন, তাদের মাথার ভেতরে ‘নাই’ শব্দটা ঢুকে গেছে। আমরা ‘নাই’-তে থাকতে চাই না। আমরা পারি, বাংলাদেশের মানুষ পারে। আমরা সেটাই প্রমাণ করতে চাই। ‘নাই’ ‘নাই’ শুনবো না। আমরা করতে পারবো, এটা করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫ পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা যে এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক । ’৯৬ সালে আমরা আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করি। তখন আমরা উদ্যোগ নেই, আমরা আবার নতুন করে শিক্ষা কমিশন গঠন করি। স্বাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থাও সেখানে সংযুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, জনগণকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে হয় তাহলে শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাজেই সমগ্র জাতিকে আমরা শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো সেই পদক্ষেপ নেই। আমরা নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ আমাদের ৫ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা দেশকে আবার অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেয়। এটা হলো বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেয়, আমরা আবার সরকার গঠন করি। তখন থেকে আমাদের আবার লক্ষ্য হয়, কীভাবে আমরা এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরতামুক্ত করবো এবং ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করি।
শিক্ষা সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগ সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর সরকার করে দিয়েছে। তাঁর সরকার চায় আকাশ গবেষণাটা করতেই হবে। তাঁর সরকার চায় আমরা যেমন চাঁদে যেতে পারি তেমনি যুদ্ধ জাহাজ এবং এরোপ্লেনও প্রস্তুত করবে দেশে। আর সেগুলো আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে করতে পারে সেজন্য এই শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি, তাছাড়া হাই-টেক সিটি, হাই-টেক পার্ক এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করেছি। তাছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষাকেও তাঁর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইতোমধ্যে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স ডিগ্রী সমমর্যাদা প্রদান করা হয়েছে।

ভোকেশনাল কোর্স চালু

মাদ্রাসা শিক্ষার পাশাপাশি ভোকেশনাল শিক্ষা, কম্পিউটার এবং কারিগরি শিক্ষা যেন শিক্ষার্থীরা পেতে পারে সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সাধারণ শিক্ষা ধারার ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভোকেশনাল কোর্স চালু করেছি, বর্তমানে ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের আধুনিকায়নের পাশাপাশি ১০০টি উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করছি, ৭০টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধকল্পে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মায়ের নামে মায়ের মোবাইল ফোনে টাকাটা পাঠানো হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ৪র্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচিসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

স্কুল ফিডিং কর্মসূচি

তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সামর্থবানদের নিজ নিজ এলাকার এই কমৃসূচি বাস্তবায়নে স্বপ্রণো দিত হয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির ফলে ঝরে পড়া এখন অনেকাংশে কমে গিয়েছে এবং ৯৮ শতাংশ ছেলে-মেয়ে এখন স্কুলে যাচ্ছে এবং অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ বছর থেকে ৩ হাজার ২১৪টি স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক কার্যক্রম ১ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ২ বছর করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এ সময় শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোন বই চাপিয়ে দেওয়া হবে না, তারা খেলাধূলার মাধ্যমে আনন্দ নিয়ে শিখবে। এই ছোটবেলা থেকেই তাদের চিন্তা চেতনা যেন বিকশিত হতে পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলবইসহ চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও সাদরি এই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করছি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলবইসহ, শেখার জন্য সিডি এবং পেন ড্রাইভ সরবরাহেরও পরামর্শ দেন তিনি।

ছেলে-মেয়েদের গাইড

ছেলে-মেয়েদের আন্তরিকতার সঙ্গে গাইড করলে তারা তত বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে বলে অভিভাবকদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে যতবেশি এই ছেলে-মেয়েদের গাইড করবো, তারা ততবেশি দক্ষ হয়ে উঠবে।’
তিনি শিক্ষার্থীদের এই শীতে নিজেদের সুস্থ রাখার এবং ঘর-বাড়ি সহ আশ পাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধেরও পরামর্শ দেন।

Loading


শিরোনাম বিএনএ