19 C
আবহাওয়া
৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ২০২০ সালে হারালাম যাদের

২০২০ সালে হারালাম যাদের

২০২০ সালে হারালাম যাদের

।। ওসমান গনী ।।

কালের পরিক্রমায় আরও একটি বছর শেষ হয়ে এলো। ২০২০ সাল  বিধ্বংসী একটি বছর।  সারা বিশ্বের মত  করোনার কারণে দেশের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিকে হারিয়েছি আমরা। এ ছাড়া অন্যান্য রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে   ২০২০ এ রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

 আবদুল কাদের:  অভিনেতা আবদুল কাদের  ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন । তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান নাট্যকার এবং অভিনেতা। ১৯৯৪ সালে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে তিনি ”বদি” চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের কাছে তিনি বদি নামেই পরিচিত। আব্দুল কাদের অভিনয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও এটি তার মূল পেশা নয়। তিনি একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আব্দুল কাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা আবদুল জলিল এবং মাতা আনোয়ারা খাতুন। তিনি খাইরুননেছা কাদেরকে বিয়ে করেছিলেন এবং  এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

এম এ হাসেম: এম এ হাসেম এ বছর ২৪ ডিসেম্বর  বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তাকে ঢাকার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।এম এ হাসেম ১৯৪৩ সালে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

এমএ হাশেম পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান । তিনি বিএনপির  সাবেক সংসদ সদস্য।

আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী :  ১৩ ডিসেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল ওয়াদুদ।

তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় বক্তা ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে তাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ফল নেগেটিভ আসে।

শাহ আহমদ শফী: ২০২০ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর  ১০৩ বছর বয়সে শাহ আহমদ শফী বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে ১৯১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরকত আলী ও মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা।

শাহ আহমদ শফী ছিলেন একজন বাংলাদেশি ইসলামি ব্যক্তিত্ব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আমীর ছিলেন। তিনি একইসাথে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের, হাটহাজারীর মহাপরিচালক ছিলেন।

মুর্তজা বশীর :মুর্তজা বশীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকায় এক মুসলিম পরিবারে মুর্তজা বশীরের জন্ম। তার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ভাষাবিদ জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এবং মা মরগুবা খাতুন।

তিনিএকজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী, কার্টুনিস্ট এবং ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তার পিতা ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ১৯৪৯ সালে বগুড়া করনেশন ইন্সটিটিউট থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে তিনি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন।

ইসরাফিল আলম: ২০২০ সালের ২৭ জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ৬ জুলাই ইসরাফিল আলমের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও ১৫ জুলাই তার করোনা নেগেটিভ আসে।

মো: ইসরাফিল আলম নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।মো: ইসরাফিল আলমের পৈতৃক বাড়ি নওগাঁও জেলার রাণীনগর উপজেলার ঝিনা গ্রামে। তিনি এমবিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

পেশায় ব্যবসায়ী মো: ইসরাফিল আলম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি দুইবার সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশনের তিনবার নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ : ২০২০ সালের ১৭ জুলাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন । তিনি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৩৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন মালদহ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ‘গোহাল বাড়ি’ এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন বসবাস করেন প্রফেসর এমাজউদ্দিন। তিনি শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।

সাহারা খাতুন : ২০২০ সালে  ৯ই জুলাই ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সাহারা খাতুন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী যিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি আওয়ামী লীগের আইন সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।।

সাহারা ১৯৪৩ সালের ১ মার্চ ঢাকার কুর্মিটোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতা হলেন যথাক্রমে, আব্দুল আজিজ ও টুরজান নেসা। তিনি বি.এ এবং এল.এল. বি ডিগ্রী আর্জন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।

লতিফুর রহমান : লতিফুর রহমান তাঁর বর্তমান গ্রামের বাড়ী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ১ জুলাই ২০২০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।  তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে এবং অসংখ্যা গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

 লতিফুর রহমান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। তিনি দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা দুইটির প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের বাজারে আন্তর্জাতিক ফাস্টফুড চেইন পিৎজা হাট ও কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন প্রচলনের জন্য সমধিক পরিচিত। ব্যবসায়ে নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১২ সালে বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড পান।

লতিফুর রহমানে জন্ম ভারতের জলপাইগুড়িতে। দুই বোনের পর তাঁর জন্ম। পরে আরও এক বোন ও এক ভাই। তার স্ত্রীর নাম শাহনাজ রহমান। তাদের এক ছেলে আর দুই মেয়ে।

এন্ড্রুকিশোর: এন্ড্রুকিশোর ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেও ক্যান্সার নির্মূল হয়নি প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পীর। চিকিৎসক হাল ছেড়ে দেওয়ায় ক্যান্সার নিয়েই ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১১ জুন দেশে ফেরেন তিনি। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি রাজশাহীতে ছিলেন।

এন্ড্রু কিশোর  বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, যে’জন্য তিনি ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে “জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প”, “হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস”, “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে”, “আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি”, “আমার বুকের মধ্যে খানে”, “আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন”, “ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা”, “সবাই তো ভালোবাসা চায়” প্রভৃতি।

কামাল লোহানী: কামাল লোহানী ২০২০ সালের ২০ জুন ৮৭ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেণ।

তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গঠিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের সংবাদ বেতারে তিনিই প্রথম পাঠ করেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

 বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান : ২০২০ সালের ৫ জুন কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ও তাঁকে সিলেট শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে ২০২০ সালের জুনে তাকে বিমান অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালের ১৫ জুন  রাত তিনটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধিন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।] পরে তাকে তার নিজ শহর সিলেটে সমাহিত করা হয়।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তিনি সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ: শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার চতুর্থ মন্ত্রিসভার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।

আবদুল্লাহ ২০২০ সালের ১৩ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর কোভিড-১৯ পরীক্ষায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মো: মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

মোহাম্মদ নাসিম: মোহাম্মদ নাসিম  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। তিনি ১৯৯৬ সালে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসাবে ছিলেন।

রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ২০২০ সালের ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন নাসিম। ওই দিনই কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে তার। এর চার দিন পর, চিকিৎসার সময় তার ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এরপর ৪ জুন অবস্থার উন্নতি হয়, তবে পুনরায় ৫ জুন ভোরে তিনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে আইসিইউতে রাখা হয়। তার চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বোর্ড গঠিত হয়। এরপর দুই দফায় ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস অনুপস্থিত পাওয়া যায়। ১২ জুন পরপর কয়েকদিন স্থিতিশীল থাকার পরে পুনরায় অবস্থার অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৩ই জুন ঢাকায় বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আজাদ রহমান: আজাদ রহমান ২০২০ সালের ১৬ মে হৃদরোগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।আজাদ রহমান  ছিলেন একজন বাংলাদেশী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীতশিল্পী।

পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করেতেন।  বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

আনিসুজ্জামান : আনিসুজ্জামান ছিলেন একজন  শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯) ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

আনিসুজ্জামান ২০২০ সালের ১৪ মে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, প্রোস্টেট সমস্যা, রক্তে ইনফেকশনসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন । আনিসুজ্জামানকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

 

জামিলুর রেজা চৌধুরী: জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০২০ সালের ২৮শে এপ্রিল ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি  ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, ও তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। তিনি ১৯৯৬ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ২০১২ থেকে আমৃত্যু ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ছিলেন ।  এছাড়া তিনি ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পিতা প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী এবং মাতা হায়াতুন নেছা চৌধুরী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।

 

মতিউর রহমান পানু :  মতিউর রহমান পানু  ২০২০ সালের ২৪ মার্চ মঙ্গলবার রাতে   ইন্তেকাল করেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।

মতিউর রহমান পানু ১৯৩৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর-এ জন্ম গ্রহণ করেন।মতিউর রহমান পানু  তিনি বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্র প্রযোজক। তিনি ১৯৬৪ সালে প্রথমে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি হারানো মানিক ছবিটি পরিচালনা করে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

 

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর :  বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর  হলেন একজন বাংলাদেশি লেখক, চিত্র সমালোচক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি ছোটগল্পে অবদানের জন্য ১৯৬৯ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের জন্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন।

২০২০ সালের ২৩ মার্চ বার্ধ্যক্যজনিত কারণে ঢাকার গুলশানে নিজের বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন এবং ২৪ মার্চ তার জন্মস্থান এলাকা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার গুলবাহার আশেক আলী খান স্কুল ও কলেজ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের: সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথের   ছিলেন একজন বাংলাদেশী বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় পণ্ডিত।২০২০ এর ৩ মার্চ রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি এবং বিশ্ব বৌদ্ধ ভ্রাতৃত্ব সংঘের সহ-সভাপতি ছিলেন।সমাজসেবায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।

শুদ্ধানন্দ ১৯৩৩ সালে ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পদুয়ায় এক সম্ভ্রান্ত বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বংঘ চন্দ্র বড়ুয়া এবং মাতার নাম রেবতী বালা বড়ুয়া। শুদ্ধানন্দ বিশুদ্ধানন্দ মহাথের এর একজন অন্যতম শিষ্য।

 

মুশাররাফ করিম: মুশাররাফ করিম  ছিলেন সত্তর দশকের একজন বাঙালি কবি। তিনি কবিতায় লোকজ শব্দ ব্যবহারের জন্য পরিচিত। এই বাংলাদেশী কবি একাধারে শিশু সাহিত্যিক এবং ঔপন্যাসিক। জীবিকাসূত্রে তিনি সাংবাদিক ছিলেন। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০০৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।

 

মুশাররাফ করিম দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০২০ সালের  ১১ জানুয়ারি রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী: ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

 

তিনি একজন  আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং নবম ও দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

পেশায় আইনজীবী ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী ছাত্রাবস্থা থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি সংরক্ষিত নারী আসন-৪৭ এর সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তিনি ১৯ মার্চ সংরক্ষিত নারী আসন-৩০ থেকে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।

Loading


শিরোনাম বিএনএ