24 C
আবহাওয়া
১১:১৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিনহা হত্যা: বন্ধ হবে ক্রসফায়ার

সিনহা হত্যা: বন্ধ হবে ক্রসফায়ার

সিনহা হত্যা: বন্ধ হবে ক্রসফায়ার

বিএনএ, ঢাকা: কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চৌকস মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক কৌতুহল রয়েছে। তবে রায়ের আলাদা আগ্রহ রয়েছে কক্সবাজার জেলার মানুষের কাছে। বিশেষ করে টেকনাফ থানার ওসি থাকাকালীন প্রদীপের হাতে নির্যাতিত শত শত পরিবারের আগ্রহটা সবচেয়ে বেশি। কারণ ওসি প্রদীপের কথিত ক্রসফায়ার কেড়ে নিয়েছিল অনেক তাজা প্রাণ। তাই স্বজন হারানোর বিচার পাওয়ার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন নিহতদের পরিবার।

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) আলোচিত ওই মামলার রায় দেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইসমাঈল সেদিন এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও দেশের স্মরণকালের আলোচিত মামলা হওয়ায় সিনহা হত্যা মামলার কার্যক্রম বেশ গুরুত্ব দিয়ে সম্পাদন করা হয়েছে। ঘটনার দেড় বছর হলেও মামলার সাক্ষ্য, জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, ৩৪২ ধারায় আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক, উভয় পক্ষের সমাপনী বক্তব্যসহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম মাত্র ৪০ কার্যদিবসে সমাপ্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে বাদি, বাদিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ বেশ সন্তুষ্ট।

মামলার ১৫ আসামিরা হলেন— বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, যারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের সবাইকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে। আমার মতো আর কোনও বোনের বুক যেন খালি না হয়।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অর্থাৎ ক্রসফায়ার বন্ধ হবে বাংলাদেশে। মানুষ সুবিচার পাওয়ার আশা রাখবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। যে কেউ বিচার চাওয়ার জন্য আদালতে আসবেন।

সিনহা হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানা থেকে টেকনাফ মডেল থানায় যোগদান করেন। সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দায়িত্ব নিয়েই ওসি প্রদীপ ক্রসফায়ার বাণিজ্যে নামেন। মাদক নির্মূলের আড়ালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশাল অঙ্কের অর্থ কামানো ছিল তার নেশা। তার অপরাধের কার্যপ্রণালী কেমন ছিলো তার বিবরণ মেলে অভিযোগপত্রে।

কোন ঘটনায় মাদক উদ্ধার হলে অথবা টার্গেট কোন ব্যক্তিকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো হলে (ফিটিং মামলায়) প্রথমত আসামি বা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হতো। তারপর তার নিজস্ব সোর্স অর্থ আদায়ের জন্য দেন দরবার করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিমকে ক্রসফায়ার না দেয়ার বিনিময়ে পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। চাহিদা অনুয়ায়ী টাকা না পেলে ভিকটিমকে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করে তার আত্মীয়স্বজনদের মামলার আসামি করা হতো। আসামিদের বাড়িঘর হতে উচ্ছেদ ও বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, সম্পদ বেদখল করে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে আদায় করাই ছিল তার নেশা ও পেশা। এই কাজের জন্য তিনি তার সমমনা পুলিশ সদস্যদের দ্বারা নিজস্ব একটি পেটোয়া ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন। (অভিযোগপত্র থেকে পাঠ-A, পৃষ্ঠা-১১)

ভুক্তভোগী অনেক পরিবার জানায়, সিনহা হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপের সহযোগিদের বিচারের দিকে চেয়ে আছেন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের স্বজনেরা। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি সিনহা হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হলে ভুক্তভোগীরা আশান্বিত হয়ে ওঠেন। রায়কে ঘিরে টেকনাফে নিহতদের ঘরে ঘরে এখন অপেক্ষার প্রহর চলছে।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফের ১৬১ জনের স্বজনেরা এখন ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিদের ফাঁসির রায় হওয়ার প্রার্থনা করছেন। তারা রোজা, নফল নামাজসহ বিভিন্নভাবে ইবাদত করে ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিদের ফাঁসির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন। একই সঙ্গে ওসি প্রদীপ ও তার সহযোগিদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে নিহতের স্বজনেরা। এই দাবিতে শনিবার হাবিব পাড়ায় নিহতের স্বজনেরা একটি মানববন্ধনও করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। পরে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। মামলায় ৮৩ জনকে সাক্ষী করা হলেও ৬৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত।

আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে গত ১২ জানুয়ারি মামলায় উভয়পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের শেষে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ