বিএনএ, স্পোর্টস ডেস্ক : লড়াই থামলো ফুটবল সম্রাটের। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় কেটেছে হাসপাতালে। পরিবারের সদস্যদের বিনিদ্র রাত কাটছিল। আইনস্টাইন হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছেন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত পেলে।
পেলের জন্ম
১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের ট্রেস কোরাসোয়েসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পেলে। যে ট্রেস কোরাসোয়েসের অর্থ হল ‘তিনটি হৃদয়’। বাবার থেকে রক্তে ফুটবল এসেছিল পেলের। তাঁর বাবা আধা-পেশাদারি ফুটবল লিগে খেলতেন। কিন্তু হাঁটুর চোটের জন্য ক্যারিয়ারে ইতি পড়েছিল।
পেলের নামকরণ
কীভাবে ট্রেস কোরাসোয়েসের ছোট্টো ছেলেটার নাম পেলে হল, তা নিয়ে প্রচুর কাহিনি আছে। তবে পেলে নিজে জানিয়েছিলেন, ছেলেবেলায় পাড়ায় প্রায়শই গোলকিপার হিসেবে খেলতেন। সেইসময় স্থানীয় খেলোয়াড় ‘বাইল’-এর সঙ্গে তাঁর তুলনা করা হত। সেই নামই ক্রমশ পালটে-পালটে পেলে হয়েছিল। যে যেটাই হোক না, গোলকিপার নয়, বরং ফরোয়ার্ড হিসেবে বিশ্ব ফুটবল কাঁপিয়েছিলেন পেলে।
পেলের বয়স যখন মাত্র ১৫, তখন ব্রাজিলের ক্লাব স্যান্টোসে যোগ দিয়েছিলেন। যে ক্লাবে ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন। জিতেছিলেন সব ট্রফি। তারইমধ্যে স্যান্টোসে যোগ দেওয়ার পেলের প্রতিভা জাতীয় দলের নজরে পড়েছিল। মাত্র ১৭ বছরেই ব্রাজিলের জার্সিতে ফুটবল বিশ্বকাপে খেলেছিলেন। বয়সের কারণে দলের এক মনোবিদ তাঁকে না খেলানোর কথা বলেছিলেন। পেলের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘স্পষ্টতই শিশু ও’। কিন্তু সেই ‘শিশু’-ই যে কী করতে পারেন, তা সুইডেনের মাটিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
পেলের রেকর্ড
১) কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ফুটবল সম্রাট। সুইডেনকে ফাইনালে ৫-২ গোলে হারিয়েছিল ব্রাজিল। দুটি গোল করেছিলেন স্বয়ং পেলে। সেইসময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন।
২) তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে – ১৯৫৮ সাল, ১৯৬২ সাল এবং ১৯৭০ সাল। বিশ্বের আর কোনও খেলোয়াড়ের এমন রেকর্ড নেই। ১৯৫৮ সাল এবং ১৯৭০ সালের ফাইনালে গোলও করেছিলেন পেলে।
৩) রেক.স্পোর্টস.সকার স্ট্যাটিস্টিক ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্রাজিলের জার্সিতে মোট ৯২ টি ম্যাচে ৭৭ টি গোল করেছিলেন পেলে। ফ্রেন্ডলিতে ৩৪ টি, বিশ্বকাপের যোগ্যতা-অর্জন পর্বে ছ’টি, বিশ্বকাপে ১২ টি, কোপা আমেরিকায় আটটি এবং অন্যান্য টুর্নামেন্টে ১৭ টি গোল করেছিলেন।
৪) ফিফার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ১,৩৬৬ টি ম্যাচে ১,২৮১ টি গোল করেছিলেন পেলে। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গোলের হার ছিল ০.৯৪। তবে কয়েকটি গোল এসেছিল মিলিটারি সার্ভিস বা ফ্রেন্ডলিতেও। অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে পেলের গোলের সংখ্যা ছিল ৭৫৭ – ৮১২ টি ম্যাচে)।
৫) বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ডও তৈরি করেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ওয়েলসের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। সেইসময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন। ওই গোলের সুবাদেই ম্যাচ জিতেছিল ব্রাজিল।
৬) বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হ্যাটট্রিকেরও নজির গড়েছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ‘ব্ল্যাক পার্ল’। সেইসময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৪ দিন।
ব্রাজিলের হয়ে তিনবার বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য পেলে মানে ইতিহাস, পেলে মানে ফুটবলের এক আস্ত অধ্যায়। তাঁর জীবনবসানের সঙ্গে সমাপ্তি ঘটল এক অনন্য রূপকথার যেখানে শুধুই ফুটবল নয়, রয়েছে এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের আকাশ ছোঁয়ার কাহিনি, কোটি কোটি হেরে যাওয়া মানুযের চোখে স্বপ্ন বুনে দেওয়ার আখ্যান।
আপনি শান্তিতে বিশ্রাম নিন ফুটবল সম্রাট।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।