21 C
আবহাওয়া
৭:২৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দেড় বছর ধরে হাসপাতালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী,খোঁজ নেই পরিবারের

দেড় বছর ধরে হাসপাতালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী,খোঁজ নেই পরিবারের

দেড় বছর ধরে হাসপাতালে ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী,পাশে নেই পরিবারের কেউই

বিএনএ,চট্টগ্রাম: একসময়ের সফল সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ছিলেন আব্দুল হাকিম মোল্লা(৭২)।গত দেড় বছর ধরে পরিবারের প্রধান কর্তাটি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের শয্যায় পড়ে আছেন, অথচ পরিবারের কেউই একটিবারের জন্যও তাকে দেখতে যাননি।এমনকি হাসপাতালের বিল না দিয়েই মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন তারা।যেন লোকটি মারা গেলেই বাঁচেন পরিবারের লোকজন।এই অসুস্থ ব্যবসায়ীরও নিজের বলতে কিছু নেই।সব সম্পত্তি সন্তানদের নামে আগেই লিখে দিয়েছেন তিনি।শেষ বয়সে এসে সেটিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল।বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালের ৮১৩ নম্বর রুমে মানবেতর দিন কাটছে আব্দুল হাই মোল্লার।ম্যাক্স হাসপাতাল ও নার্স, ওয়ার্ডবয়রাই এখন তার আত্মীয়স্বজনের ভূমিকা পালন করছেন।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল আব্দুল হাই মোল্লাকে হার্টের অসুস্থতাজনিত কারণে নগরীর মেহেদিবাগে ম্যাক্স হাসপাতালের এইচডিইউতে ভর্তি করান তার ছেলে শফিকুল ইসলাম শুভ।কিন্তু ভর্তির পর থেকে রোগীর কোন খোঁজ নেননি তারা।হাসপাতালের বকেয়া বিল বর্তমানে অর্ধকোটিতে এসে দাঁড়ালেও তার পরিবারের কারোরই খোঁজ নেই।আপনজন কেউই পরিবারের এই কর্তার খোঁজও রাখছে না।এখন রোগী ও বকেয়া বিল আর রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।বিল ও রোগী হস্তান্তরের ব্যাপারে ছেলে শুভর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও প্রতিবারই বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।এমন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয়ও নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তাতেও সাড়া দেননি।

ম্যাক্স হাসপাতাল ম্যানেজার আশিক দে বিএনএকে জানান,নগরীর স্ট্রান্ড রোডের রশিদ বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় আল হোসাইন শিপিং লাইন নামে রোগীর ছেলে শফিকুল ইসলাম শুভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এছাড়াও তার সিএন্ডএফ ব্যবসাও আছে।সেখানে গিয়েও আব্দুল হাই মোল্লার ছেলে শুভর দেখা পায়নি হাসপাতালের প্রতিনিধিরা।মালিক শুভর অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মো. ইসমাইল হোসেন মালিকের পক্ষ হয়ে গত নভেম্বরে ম্যাক্স হাসপাতালকে একটি লিখিত বক্তব্য দেন।যাতে শুভর পক্ষ থেকে বলা হয়, ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।পারিবারিক সমস্যার কারণে কোনো নিজস্ব লোক না থাকায় হাসপাতালে কাউকে উপস্থিত রাখা সম্ভব হয়নি।কিন্তু মাস পার হতে চললেও ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শফিকুল ইসলাম শুভ কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারেনি।

এদিকে, মাসের পর মাস রোগী নিয়ে এমন অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পড়ায় গত ৬ ডিসেম্বর নগরীর চকবাজার থানায় রোগীর ছেলে সফিকুল ইসলাম শুভর নামে একটি অভিযোগ দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মোট ৪৯ লাখ ৭১ হাজার ৮১৭ টাকা বকেয়ার বিপরীতে দেড় বছরে মাত্র ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৩১ লাখ ৮১৭ টাকা বকেয়া রয়েছে।এই রোগীটার জন্য খুব মায়া হয়।তিনি তার জীবনের সমস্ত উপার্জন ছেলেমেয়েদের কাছে ভাগ করে দিয়ে বিপদে পড়েছেন।এখন তার পরিবারের সদস্যরাই তাকে দেখতে আসে না।খোঁজখবর নেয় না।বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও হাসপাতালের নাম শুনলে ফোন রেখে দেয়।দেড় বছর পর্যন্ত ম্যাক্স হাসপাতালই তার পরিবার।ওর্য়াড বয়-নার্সরাই এখন তার ছেলে-মেয়ে।তারাই রোগীকে খাওয়ায়, প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করেন।যে কাজগুলো রোগীর পরিবারের করার কথা ছিল, সেগুলো ওয়ার্ড বয়, নার্সরা করছেন।এখন রোগীকে পরিবারের কাছেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।রোগীর পরিবারের টাকার অভাব নেই। শুধু অনিচ্ছার কারণে তারা এই অসহায় মানুষটাকে কষ্ট দিচ্ছে।

এ বিষয়ে রোগীর পুত্র শফিকুল ইসলাম শুভ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,হাসপাতালের বিল ও রোগীর খবর না নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন,তিনি সিএন্ডএফের ব্যবসা করেন।সেজন্য দেশের এদিক থেকে ওদিক যেতে হয়।ব্যস্ততার জন্য যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।আর বিলটা যেহেতু বড়,তাই হাসপাতালকে বলা হয়েছে এখন করোনার জন্য ব্যবসার অবস্থা খারাপ।তাই সব টাকা একসঙ্গে দেয়া যাচ্ছেনা।

শুভ বলেন, তার পিতা চারটা বিয়ে করেছেন।তিনি প্রথম পক্ষের একমাত্র সন্তান।চার স্ত্রীর কারও সঙ্গেই তার সম্পর্ক নেই।প্রথম স্ত্রীর একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে নিজ দায়িত্বে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করান বলে জানান তিনি।

আব্দুল হাই মোল্লার এই ছেলে বলেন,তিনিই পিতার একমাত্র অভিভাবক।তিন বছর বয়সে তার মায়ের সঙ্গেও বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়।তবে জন্ম দিয়েছে সেকারণে অন্য সন্তানদের মতো ফেলে দিতে পারেন নি বলে জানান শুভ।

এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান,‘ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। কয়েকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর ছেলে শুভর সঙ্গে কথা হয়েছে।কিন্তু রোগীর ছেলে বেশ উগ্র প্রকৃতির। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর বিষয়টা ও হাসপাতালরে পাওনার বিষয়টা মীমাংসা করার অনুরোধ করলেও তাতে কোনো কর্ণপাত করেনি বলে জানান ওসি।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

Loading


শিরোনাম বিএনএ