বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-১৮ আসনের হালচাল।
ঢাকা-১৮ আসন
ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ও ৫৪ নং ওয়ার্ড এবং বিমান বন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৯১ তম আসন।
২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার পর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে ঢাকা ১৮ আসনটি সৃষ্টি করে।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬ শত ৪৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ১৩ হাজার ৩ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আজিজুল বারী হেলাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৪ শত ৮১ ভোট।
দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭ শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ১ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬০ হাজার ৮ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফ এর মো. আতিকুর রহমান নাজিম। টেলিভিশন প্রতীকে তিনি পান ৬ হাজার ৪ শত ১৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫ শত ৭২ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন, ধানের শীষ প্রতীকে আসম বর এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আনোয়ার হোসেন, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফএর আতিকুর রহমান নাজিম, বাঘ প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল পিডিপির রফিকুল ইসলাম, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির মাসুম বিল্লাহ, মোমবাতি প্রতীকে ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল মোমেন, হারিকেন প্রতীকে মুসলীম লীগের রেজাউল ইসলাম স্বপন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৩ হাজার ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির শহীদ উদ্দীন মাহমুদ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭২ হাজার ১ শত ৫০ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
২০২০ সালের ৯ জুলাই সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মৃত্যবরণ করেন। পরে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিব হাসান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯০ (ঢাকা-১৭)
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে এবং পরে উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।
ঢাকা-১৮ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ হাবিব হাসান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। হাবিব হাসান ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মতিউর রহমান, বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাজান আলী মণ্ডলসহ অন্তত ডজনখানেক নেতা।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ২০২০ সালের উপ নির্বাচনের প্রার্থী যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সদস্য চিত্রনায়ক সোহেল রানা প্রকাশ (মাসুদ পারভেজ), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সহধর্মীনী শেরিফা কাদের ও যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধা, ২০২০ সালের উপনির্বাচনের প্রার্থী হাজী নাসির উদ্দিন সরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এর ‘বসুন্ধরা’ শাখা সভাপতি ও আদিপ গ্রুপের চেয়ারম্যান দয়াল কুমার বড়ুয়া।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনটি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সৃষ্টি হয়। ওই বছর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন এডভোকেট সাহারা খাতুন। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই পরিসংখ্যান থেকে এটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে মনে হতে পারে! কিন্তু আড়ালে অন্য কিছু। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও বিএনপিও কম শক্তিশালী নয়। সম্প্রতি বিএনপি এক দফা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে মাঠে নেমেছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা শক্ত হলেও দলীয় কোন্দল তীব্র। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে এই কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপ, উপগ্রুপে বিভক্ত। একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপিও গ্রুপিং মুক্ত নয়। ২০২০ সালের উপ নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন গ্রুপ ও বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ গ্রুপ নিজেদের মধ্যে মারামারি, ভাঙ্গচুরসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। এই গ্রুপিং তৎপরতা এখনো চলমান রয়েছে। সেইদিক থেকে বিএনপি, আওয়ামী লীগ কোন দলেই এই আসনে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার নয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৯১ তম (ঢাকা-১৮) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হলেও যে দল গ্রুপিং, বিরোধ নিরসন করতে পারবে সেই দলেই বিজয়ী হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। অন্যদের জানার সুযোগ দিন। প্রতিদিন ধারাহিকভাবে প্রচারিত আসনভিত্তিক গবেষণামূলক প্রতিবেদনগুলো দেখুন এবং নিজের রাজনৈতিক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন। লাইক, কমেন্ট, ও সাবস্ক্রাইব করে ‘বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর’ এর সঙ্গে থাকুন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিখতে চান তিমুরের প্রধানমন্ত্রী
বিএনএনিউজ/ শাম্মী, রেহেনা, বিএম, ওয়াইএইচ