22 C
আবহাওয়া
১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ৪৩ বছরেও হয়নি জিয়া হত্যা মামলা !

৪৩ বছরেও হয়নি জিয়া হত্যা মামলা !


বিএনএ, ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে ৩০ মে ভোররাতে একদল সেনা সদস্য হত্যা করে। এরপর কেটে গেছে ৪৩ বছর।কিন্তু জিয়াউর রহমানের পরিবার বা বিএনপির পক্ষ থেকে কখনও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি বা মামলা করা হয়নি। ভুল শুনেছেন? না, ভুল শুনেননি। ঠিকই শুনেছেন। জিয়া যখন নিহত হয়, তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন হন হয় দলটি। কেন জিয়াউর রহমান হত্যা মামলা দায়ের করা হয়নি। তার উত্তর গত ৪৩ বছরেও পরিস্কার করে বলেনি জিয়া পরিবার বা তার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি।

YouTube player

প্রসঙ্গত, সামরিক আদালতে শুধু বিদ্রোহের বিচার হয়েছিল। তিন মাসের মধ্যে সামরিক আদালতে তড়িঘড়ি করে গোপন বিচারের মাধ্যমে ১৩ সামরিক কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। ১৩ জনের ১২ জনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়া ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। অব্যাহতি দেয়া হয় দুইজন জুনিয়র অফিসারকে।

বিদ্রোহী অফিসারদের পরিকল্পনা ছিল জিয়াকে সেনানিবাসে নিয়ে চাপের মুখে দুর্নীতিবাজ এরশাদকে বরখাস্তসহ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবিদাওয়া আদায় করা। হঠাৎ করেই কার প্ররোচণায় মতি হত্যা করল জিয়াকে? পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে জিয়া হত্যায় মতির মূল কারিগর ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ।

জেনারেল মঞ্জুর জিয়াউর রহমানকে হত্যার বিষয়টি আগে জানতেন না এবং ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তা জেনেছেন।এমন দাবি করেন জেনারেল মন্জুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর রেজা। তার কাছে জিয়া হত্যার বিষয়ে জানতে পরে বলেছিলেন “ওহ হোয়াট হ্যাভ দে ডান”- “ওরা কী করেছে”?

তবে জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন। সকাল থেকেই জেনারেল মঞ্জুর সকলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য সেনা কর্মকর্তা এবং সৈনিকদের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে ঘুরে বক্তব্য দিয়েছেন।

সেনা প্রধানের পদ থেকে জেনারেল এরশাদকে অপসারণ করে জেনারেল মঞ্জুর বা অন্য কোন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ঐ পদে নিয়োগ দেয়া হোক- এরকমটাই চেয়েছিলেন বিদ্রোহে জড়িত সেনা কর্মকর্তারা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিপ্লবী পরিষদের ঘোষণায়। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ৩০ মে জেনারেল মঞ্জুর চট্টগ্রাম বেতার থেকে কয়েকবার ভাষণ দিয়েছিলেন।

সেই ভাষণে জেনারেল মঞ্জুর জেনারেল এরশাদকে সেনা প্রধানের পদ থেকে বরখাস্ত এবং জেনারেল মীর শওকত আলীকে সেনা প্রধান হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এছাড়া বিপ্লবী পরিষদ গঠনের ঘোষণা দিয়ে জেনারেল মঞ্জুর সেনা বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে, সেখান থেকে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িতরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল এমন পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। তাহলে কেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছিল? সেই প্রশ্নের জবাব এখনো অজানা রয়েছে গেছে। তবে সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের কোনঠাসা করে অমুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্ব দেয়ার কারণেই সেনাবাহিনী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িতদের মধ্যে কর্ণেল মতিউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে বীরবিক্রম খেতাব পা্ওয়া এবং লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মেহবুবুর রহমান ছিলেন বীর উত্তম খেতাবধারী। আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জেনারেল মঞ্জুরও বীরউত্তম খেতাব পেয়েছিলেন। মতিউর রহমান এবং জেনারেল মঞ্জুরের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। এছাড়া মেহবুবুর রহমান সম্পর্কে জেনারেল মঞ্জুরের ভাগ্নে ছিলেন।

জুনিয়র অফিসাররা সরাসরি নিজেরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমে সার্কিট হাউসে রকেট লান্সার নিক্ষেপ করে। গুলির শব্দ শুনে জিয়া রুম থেকে বের হয়ে এলে কয়েকজন অফিসার তাকে ঘিরে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই ওই সময় লে. কর্নেল মতিউর রহমান মাতাল অবস্থায় টলতে টলতে ‘জিয়া কোথায়, জিয়া কোথায়’ বলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসে এবং পলকেই গজখানেক সামনে থেকে তার চায়নিজ স্টেনগানের এক ম্যাগাজিনে থাকা ২৮ টি গুলি জিয়ার ওপর চালিয়ে দেয়। জিয়ার পুরো শরীর ঝাঁজরা হয়ে যায়।

উপস্থিত অন্য অফিসাররা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান। তারা কেউ কোনো গুলি ছোড়েননি। দু-একজন অফিসার ‘কী করছেন, কী করছেন’ বলে চিৎকার করে ওঠেন।

জিয়াকে হত্যার পেছনে লে. কর্নেল মতির ক্রোধ ও আক্রোশের কারণ ছিল। ১৯৮১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে, অর্থাৎ হত্যাকাণ্ডের কদিন আগে আমেরিকায় সামরিক প্রশিক্ষণে মনোনয়নের জন্য তৎকালীন লে. কর্নেল মতিউর রহমান, লে. কর্নেল ইমামুজ্জামান ও পাকিস্তান প্রত্যাগত লে. কর্নেল সাখাওয়াত হোসেনসহ ৫ জনকে একত্রে সেনাসদরে বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়। ইমামুজ্জামান ও মতিকে বাদ দিয়ে সেনাপ্রধান এরশাদ আমেরিকায় প্রশিক্ষণের জন্য সাখাওয়াতকে মনোনীত করেন। সাখাওয়াতের চেয়ে মতি ও ইমামুজ্জামান অধিকতর যোগ্য ছিল বলে অনেকের ধারণা। মনোনয়ন-বঞ্চিত মতিউর রহমান এতে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হন এবং ওই দিনই বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সাদেকের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভের কথা জানান।

মতি আরও অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা অফিসারগণ আর্মিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং এই বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানানোর জন্য জেনারেল সাদেককে অনুরোধ করেন।

জিয়া হত্যার দুইদিনের মধ্যে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পালিয়ে যায় জেনারেল মঞ্জুর। কিন্তু চা বাগান থেকে তাকে আটক করে হাটহাজারি থানার তৎকালীন ওসি কুদ্দুস। তাকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেনা প্রধান এরশাদের নির্দেশে তাকে সেনানিবাসে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জিয়া-মনজুর হত্যায় সবচেয়ে লাভবান ব্যক্তি হচ্ছেন এরশাদ। আর এরশাদই যে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায়,জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পরে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। কিন্তু দশ মাস পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছিলেন।

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ