বিএনএ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: কনোরা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের দেয়া ৭দিনের কঠোর লাকডাউনে আম বাজারজাতকরণ নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে জেলার হাজারো আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। যদিও আমসহ অন্যান্য কাঁচামাল পরিবহন বা বাজারজাতকরণের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।কিন্তু বাস্তবে চিত্র অনেকটায় ভিন্ন। আম বাজারজাত করার ক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখিন হচ্ছে চাষী ও ব্যাবসায়ীরা।আম পাড়া শ্রমিক বা আম পরিবহনে ছোট ছোট যানবাহন ঠিকভাবে চলাচল করতে পারছেনা। বিভিন্নভাবে বাধা দেয়ায় জেলার প্রধান অর্থকরী ফসলটি সঠিকভাবে বাজারজাত করতে না পারায় চরম দূশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। জেলার কারেনা সংক্রমণের বিষয়টি জানার পর বাইরের জেলা থেকে আম কিনতে আসছেনা ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা।
এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে আমের সঠিক দাম না পাওয়ায় এবং ভালো ফলন না হওয়ায় চাষীরা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। এবছর ভালো ফলন হলেও করোনা সতর্কতায় আবারও বেকায়দায় জেলার আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। তাই আমের ভরা মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম বাজারজাতকরণে তৃণমূল পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। অন্যথায় জেলার প্রধান অর্থকরী আম নিয়ে আবারও চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
এদিকে, গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। শুরু হয়েছে খিরসাপাত, হিমসাগর, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, লক্ষ্মণভোগ, বোম্বাই জাতের আম পাড়া। জেলার আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকরা প্রস্তিুতি নেয়ার মধ্যেই হঠাৎ করেই জেলাব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় কৃষকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় কঠোর লকডাউন চলছে, রাস্তায় কোন গাড়ি চলতে দেয় না পুলিশ। এভাবে লকডাউন হলে কোথাও আম বিক্রি যাবেনা। আশেপাশের প্রায় সবার গুটি জাতের আম পাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু বাজারে আম নিয়ে যাওয়া নিয়ে মনে আতংক কাজ করছে।
ভোলাহাট উপজেলার আমচাষী সাদিকুল ইসলাম জানান, আম কিনতে বেশিরভাগ ক্রেতা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আসতে পারছে না। এতে আম বিক্রি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি নায্যমূল্য পাবে না আম চাষীরা। তাই বিষয়টি নিয়ে ভোলাহাটের আম চাষীরা উদ্বিগ্ন।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম বলেন, জেলার বেশিরভাগ আমচাষী, ব্যবসায়ী ও আড়তদার স্বল্পশিক্ষিত। তাই আম বাজারজাত করা ও পরিবহন চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় নেই বিষয়টি সিংহভাগ আমচাষী জানেন না। তাই তাদের মধ্যে গতবছরের মতো ব্যবসা করতে না পারার একটা আতঙ্ক কাজ করছে। এনিয়ে আম চাষীদের মাঝে আরও ব্যাপকহারে সচেতন করতে হবে।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে আম বাজার করার সীদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না। কারন এভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হবে না এবং আমচাষীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা পর্যায়ের আম বাজারগুলোকে বেশি মনিটরিং করা ও বাজারের পরিধি বাড়ানোই হবে যুক্তিযুক্ত।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। তবে জেলার প্রধান অর্থকরী ফল আমের বাজার চলমান রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমের বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে পরিবহনে ছাড় দেয়া হয়েছে। রাখা হয়েছে লকডাউনের আওতার বাইরে। সরাসরি বাগান থেকে ট্রাকে আম পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও অনলাইনে অর্ডার গ্রহণ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে হাট বাসানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোর আকার বাড়ানোরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গত ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিশেষ কঠোর লকডাউন দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জেলার আম চাষীরা।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলায় এবছর প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানের প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে এ বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
বিএনএনিউজ/রঞ্জু,আরকেসি