বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন জন থেকে অর্থ আদায়ের দায়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন শাখার উচ্চমান সহকারী ইশরাত জাহান চৌধুরীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে অসদাচরণ, প্রতারণা ও দুর্নীতির অভিযোগে ওই নারী কর্মকর্তাকে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চাকরি প্রবিধানমালা ১৯৯১-এর ধারা ৩৯ ও ৪০ এর বিধিমালার ৪০ (খ) (ঈ) মোতাবেক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদ (উপ-সচিব) স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
জানা গেছে, বন্দর, কাস্টমস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে, চাকরি না হলে টাকা ফেরতের ব্যাংক-গ্যারান্টি চেকও দেন। এসব কথা বলে ইশরাত জাহান হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু তা নয়, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সিল ও স্বাক্ষর জাল, এমনকি ভুয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছেন ওই নারী।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই নারী রাজন মহাজন, রিপন চন্দ্র দে, আব্দুল করিম, অসীম বণিক, সুব্রত নাথ, রাজিব দাস, অভিজিৎ বিশ্বাস, বিশ্বজিৎ চন্দ্র নম, অরুণ কান্তি দাশ, তানিয়া আকতার, আমীর হামজা, আব্দুল কাদের শরীফ, মো. জাবেদ ও আবুল কাশেমসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে চাকরি দেওয়ার নামে নিজ ব্যাংক একাউন্টে অর্থ আদায় করে ভুয়া নিয়োগপত্র দেন। পরে বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগকারীদের দাখিল করা কাগজপত্র, ভিডিও ক্লিপ, ফোন আলাপ ও ব্যাংক একাউন্টে অর্থ জমা হওয়ায় জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওই নারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে গেলে গত ২৫ জানুয়ারি বন্দর ভবনের তদন্ত কার্যালয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। এমনকি তদন্ত কাজে বাধা দিয়ে অভিযোগকারী ও সাক্ষীদের ভয়-ভীতি দেখান। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বন্দরের ইশরাত জাহান চৌধুরীকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
প্রতারণার অভিযোগে ইশরাত জাহানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছিল চট্টগ্রামের আদালতে। এরমধ্যে গত ডিসেম্বরে একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
ইশরাত জাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের উচ্চমান সহকারী। তিনি চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার আওতাধীন গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় থাকেন। টাকা নেওয়ার পর ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং রেজাল্ট শিট তৈরি করেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, একেকজনের কাছ থেকে তিনি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা নেন। আবার এসব টাকা তিনি কখনো গোসাইলডাঙ্গার বাসা এবং শহরের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে বসে চাকরি-প্রত্যাশীদের সঙ্গে দরবার বসাতেন। এ সময় তিনি প্রতারণার কৌশল হিসেবে পবিত্র কোরআন শরীফ ও নিজের ছেলের মাথায় হাত রেখে কসম কেটে নিজ হাতে টাকা গুনে নিতেন। তার কথায় বিশ্বাস করে চাকরিপ্রত্যাশীরা মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন।
বিএনএনিউজ/মনির