বিএনএ,ডেস্ক : লাইলাতুল কদর বা শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান বা মর্যাদা। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত।
এই রাতে পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিল হয়। আল-কোরআনে সূরা ক্বদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এই সুরায় শবে কদরের রাত্রিকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।
প্রতিবছর রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭, রমজান দিবাগত রাতগুলো। তবে অনেক আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যা মতে ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ সাতাশ তারিখে পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত।
আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ. তার রচিত ‘লাতাইফুল মা‘আরিফ’ কিতাবের ৬৭২ পৃষ্টায় উল্লেখ করেছেন ২৭তম রাত্রিতেই লাইলাতুল কদর হবে। তার বক্তব্যের পক্ষে ২টি বিস্ময়কর যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি।
লাইলাতুল কদর কথাটির মধ্যে আরবী হরফ বা অক্ষর আছে ৯টি। আল্লাহ তা‘আলা সূরা কদরের লাইলাতুল কদরের কথা ৩ বার উল্লেখ করেছেন। লাইলাতুল কদর এর ৯টি অক্ষরকে ৩ দিয়ে গুণ করলে ফলাফল হয় ২৭। এ থেকে বুঝা যায় রমজানের ২৭ তম রজনীতেই লাইলাতুল কদর হবে।
দ্বিতীয়ত: ‘সূরা কদর’ সূরায় মোট শব্দ আছে ৩০টি। এই هِيَ শব্দটি হলো ২৭ তম শব্দ ।এতে অনুমেয় হয়, লাইলাতুল কদর হবে ২৭ তম রজনীতে।
শবে কদরের দোয়া আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?
রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘তুমি বলো, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’।
যার অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন।
এ রাতকে যে কাজে লাগাতে পারেনি আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.) তাকে বড় হতভাগা বলেছেন। উম্মতগণের এ রাতের প্রত্যেকটি আমল আল্লাহর দরবারে গৃহিত হয়। মাত্র একরাতের আমল দিয়ে নিজেকে জান্নাতি বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে শবে কদর।
শবে কদরে চার শ্রেণির মানুষকে ক্ষমা করা হবে না, তাদের কোনো কিছুই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না যতক্ষণ না তারা এসব অপকর্ম থেকে সংশোধন না হয়। এরা হলো, এক- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, মাতা পিতার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্ক ছিন্নকারী।
মুহাম্মদ এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারনে বহু বছর আল্লাহর ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। কোরান ও হাদীসের বর্ননায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া, হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর আল্লাহর ইবাদত করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোন প্রকার পাপ কাজ করেননি।
কিন্তু মুহাম্মদ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা ক্বদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ননায় জানা যায়।
শবে কদর এমন একটি মহিমান্বিত রাত যে রাত সম্পর্কে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, এ রাতে সিদরাতুল মুনতাহায় অবস্থিত অগণিত ফেরেশতাসহ হজরত জিবরাইল (আ.) দুনিয়ায় অবতীর্ণ হন এবং ফেরেশতারা দুনিয়ার সমস্ত অংশে ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেক স্থানে স্থানে রুকু–সিজদা করেন। মুমিন নর–নারীর জন্য দোয়ায় মশগুল হন। এই মহান রজনীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য গুনাহগারকে মাফ করেন, তওবা কবুল করেন। মাতা–পিতা ও আত্মীয়স্বজনের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে তাদের কবর জিয়ারত ও তাদের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব, ওজি