বিএনএ, ঢাকা: রোজার শুরুতেই মৌসুম শুরু হয় তরমুজের। মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় ইফতারে চাহিদা বাড়ে এই ফলের। সুযোগ নিয়ে বিক্রেতারা হুহু করে বাড়ায় দাম। পিস হিসাবে বিক্রি না করে কেজি ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সাত থেকে আট কেজির একটি তরমুজের দাম পড়ে ৭০০-৮০০ টাকা। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘তরমুজ বয়কটের’ ডাক দেয় সাধারণ মানুষ।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়।
তরমুজ রসালো ফল হওয়াতে রমজান মাসে এর কদর বেশ বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথে তরমুজের দামও আকাশচুম্বী হয়ে দাঁড়ায়। স্থান ভেদে প্রতিটি তরমুজ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে নেটিজেনদের তরমুজ বয়কটের ডাকে সপ্তাহের ব্যবধানে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে ৩০০ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু একদিনের ব্যবধানেই আজ রাজধানীর বিবিন্ন বাজারে তা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়ে দেখা গেছে।
এদিকে, আগের তুলনায় দাম কমে যাওয়ায় লোকজনকে হুমড়ি খেয়ে তরমুজ কিনতে দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় তরমুজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। ক্রেতারা বলেন, গত সপ্তাহে তরমুজের যে দাম ছিল, চলতি সপ্তাহে তার অর্ধেকে নেমে এসেছে। রমজানের শুরুতে তরমুজ কিনতে না পারলেও এখন কেনা যাচ্ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ বৃষ্টির কারণে জমিতে অনেক তরমুজ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। লোকসানের ভয়ে কৃষকরা পরিপক্ক হওয়ার আগেই তরমুজ বাজারে তুলছেন। তাই আগের তুলনায় দাম অনেকটা কম। আবার দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ না উঠায় অনেক কৃষক তরমুজ তুলছেন না। তাই এখন জমিতেই পঁচে যাচ্ছে তরমুজ।
হাতিরপুল বাজারের ফল বিক্রেতা সোবহান বলেন, আমরা ৬০০ পিস তরমুজ এনেছি। আগে যা প্রতিপিস ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন তা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। অর্ধেকের মত বিক্রি হয়েছে। আজকের মধ্যে আশা করছি বাকিগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।
এদিকে, কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার দেশে প্রচুর তরমুজের ফলন হয়েছে। তবে, সে অনুযায়ী ক্রেতা না পাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
অন্যদিকে, কৃষকদের দাবি, পাইকারদের কাছ থেকে তারা নাম মাত্র দামে বিক্রি করছে তরমুজ। তরমুজ বিক্রি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। এতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।
কৃষকরা জানান, তরমুজ পাইকারি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচই উঠছে না। ফলে কৃষকদের মাথায় হাত। তরমুজ চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এছাড়া হঠাৎ বৃষ্টিতেও পড়তে হচ্ছে বিপাকে।
পটুয়াখালী জেলার কৃষকরা জানান, যারা খেত কিনে রেখেছিলেন বৈরি আবহাওয়ার কারণে তারা গত দু’দিন অপরিপক্ক তরমুজসহ সব তরমুজ কেটে বাজারে তুলেছেন। ফলে বাজারে তরমুজ সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা নেই। আবার কাঁচা থাকার কারণে সাধারণ ক্রেতারাও তরমুজ কিনছেন না। পাশাপাশি খেতে এখনও ৪০ থেকে ৫০ ভাগ তরমুজ রয়েছে। কৃষকরা আরও জানান, কয়েক দিন আগেও এক ট্রাক তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকায়। এখন তা ২-৩ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে খেতের তরমুজ ৪-৫ দিনের মধ্যে পেকে যাবে। তখন তরমুজ সরবরাহ আরো বাড়বে। তখনো দাম কম থাকলে কৃষকেরা পকেটের টাকা গচ্চা দিয়ে পরিবহন খরচ করে তরমুজ নিয়ে হয়তো বাজারে যাবেন না। তখন খেতেই পঁচে যাবে সব তরমুজ।
কৃষকেরা বলছেন, কয়েক দিন আগে সবচেয়ে ভালো মানের ৮-১২ কেজি ওজনের ১০০টি তরমুজ পাইকারি বিক্রি ছিল ৪ হাজার টাকা। যা এখন কমে হয়েছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। যা দিয়ে উৎপাদন খরচও উঠবে না। এরপর তা পরিবহন খরচ করে বাজারে নেওয়াতো আর সম্ভব না।
বিএনএ/এমএফ