বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রকাশ করছে। আজ থাকছে লালমনিরহাট-২ আসনের হালচাল।
লালমনিরহাট-২ আসন
লালমনিরহাট-২ সংসদীয় আসনটি কালিগঞ্জ এবং আদিতমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৭ নাম্বার আসন।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামশুল হোসনে সরকার বিজয়ী হন
১৯৭৩ সালের ৭ই মার্চ অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-১৭ নামে পরিচিত ছিল।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ৪১ হাজার ৪ শত ৩৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামশুল হোসনে সরকার বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৬ শত ৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ মোজাফফর এর গাউসুল আজম। তিনি পান ৫ হাজার ৫শত ৩৬ ভোট।
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির মজিবর রহমান
১৯৭৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি পরিচিতি হয় রংপুর-৬ নামে। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৯শত ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৩ হাজার ৩ শত ৩৩ জন। বিএনপির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ৭ শত ২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের করিমুদ্দিন আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ৩ শত ৯৫ ভোট।
তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে মজিবর রহমান বিজয়ী
১৯৮৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসনের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, লালমনির হাট-২। নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০ হাজার ২২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। তিনি পান ২৫ হাজার ৪ শত ৫৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান। তিনি পান ২২ হাজার ১ শত ৫৮ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি।
চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে মজিবর রহমান পুনরায় নির্বাচিত
১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ, বিএনপিসহ পরিচিত রাজনৈতিক দল গুলো অংশগ্রহণ করেনি। প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ আলম আলবানি। তিনি পান ১২ হাজার ৫ শত ৫৭ ভোট।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে মজিবর রহমান আবারও নির্বাচিত
১৯৯১ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ হাজার ৯ শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৯১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫১হাজার ৭ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সামশুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৪শত ১৩ ভোট।
৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ফ্রিডম পার্টি ও কিছু অখ্যাত দল ও ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিরোধও করে। ভোটার বিহীন এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হয়। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আব্দুল মান্নান সরকার। তিনি পান ২ লাখ ৯ শত ৮৮ ভোট। এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।
সপ্তম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ১২ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৮ শত ৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৬ শত ৮৩ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত মজিবর রহমান
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ২ শত ৫৮ জন । ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ১ শত ২৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৪ শত ৬৮ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি পান ৫৭ হাজার ২ শত ৬৫ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯শত ৪৯ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩ হাজার ৩৯ শত ৯৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মজিবর রহমান বিজয়ী হন। নাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬১ হাজার ৬ শত ৭৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদ হেলাল । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৫ শত ৯৯ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ বিজয়ী
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে লালমনির হাট-২ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩ শত ৩৮ জন । ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ, ধানের শীষ প্রতীকে রোকন উদ্দিন বাবুল, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের বাদশা মিয়া, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনে বাংলাদেশের ইব্রাহীম হোসেন খান, আম প্রতীকে পিপলস পার্টির মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুজ্জামান আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রোকন উদ্দিন বাবুল। ধানের শীষ প্রতীকে ৭৮ হাজার ১ শত ৯৩ ভোট।
কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, লালমনির হাট-২ আসনে প্রথম, দশম, একাদশ সংসদে সংসদে আওয়ামী লীগ, দ্বিতীয় এবং ১১ দিন মেয়াদের ৬ষ্ট সংসদে বিএনপি, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম নবম সংসদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়েবড়ে। তবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। দ্বাদশ সংসদে ভোটের লড়াই কেমন হবে তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমীকরণের ওপর।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ