বিএনএ ডেস্ক : রহস্যময় আমাদের এই মানব শরীর। এর রহস্যের অনেক কিছুই আমরা জানি না। এমনকি শরীরের অনেক অংশ এখনো আমাদের অজানা। শরীরের তেমন কিছু অংশ নিয়েই এ প্রতিবেদন।
চোখের পাতার ছিদ্র: আমরা যদি আমাদের চোখের পাতা দুটিকে সরিয়ে ফেলি তাহলে চোখের ভিতরের দিকে এক কোণায় আমরা একটি ছিদ্র খুঁজে পাব, যাকে ল্যাক্রিমাল পাংটাম বলে। চোখের নিচের পাতার কোণায় এটি থাকে এবং অশ্রæ বের হয়ে যেতে সহায়তা করে।
বাহুর সাময়িক পেশী: প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষের কনুই থেকে হাতের তালু পর্যন্ত বহমান এক প্রকারের সাময়িক পেশী থাকে, যাকে পালমারিস লংগাস বলে। বৃদ্ধাঙুল আর তর্জনী একসঙ্গে করে কব্জির পেশী শক্ত করলেই এই সাময়িক পেশী হাতের তালুর ঠিক নিচে শিরার মতো জেগে উঠবে। তবে শিরার মতো দেখালেও এটি আসলে কোনো শিরা নয়, বরং এটি একটি মাংসপেশী। মানুষের দেহে সাধারণত এই পেশী কব্জির নমনীয়তা রক্ষা করে। কারো বাহুতে যদি এই পেশী না থাকে বা কোনো সার্জারিতে বের করে ফেলা হয় তাহলে বড় কোনো শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার অবকাশ নেই। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, এটা আমাদের কোনো কিছু হাতে ধরে রাখার কাজে ব্যবহƒত হয়।
ত্বকের আলো: জাপানের একদল বিজ্ঞানী অতিসংবেদনশীল ক্যামেরা দিয়ে অন্ধকারে মানবদেহের ওপর একটি পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় দেখা যায় যে, মানুষের দেহের কপাল, গাল এবং ঘাড়ের পাশ থেকে উজ্জ্বলতা বিচ্ছুরিত হয়। এই উজ্জ্বলতা শেষরাতের দিকে অনুজ্জ্বল এবং শেষ বিকেলে সবচেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়, যা খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়।
হাঁটার জন্য সহায়ক প্রোটিন: গবেষক এবং বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় জানা গেছে যে, মানবদেহের পায়ের পাতায় একধরনের প্রোটিন থাকে যা হাঁটতে এবং হাঁটার সময় ভারসাম্য রক্ষার্থে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে। এই বিশেষ ধরনের প্রোটিন আমাদের হাঁটার সময় পায়ের পাতায় এক বিশেষ ভঙ্গিমায় প্রবাহিত হতে থাকে। প্রবাহিত হওয়ার সময় এই প্রোটিন বিভিন্ন গুচ্ছে ভাগ হয়ে গিয়ে মাত্র ৮ ন্যানোমিটার প্রবাহিত হয়ে থাকে।
কানের পেশী: মানবদেহের কানের বাইরের অংশে অরিকুলার পেশী নামক তিনটি পেশী থাকে। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই পেশী সঞ্চালনের মাধ্যমে কান নড়াচড়া করতে পারতেন, যেমনটি অন্যান্য অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল করে থাকে। আধুনিক মানবদেহে এই পেশীর খুব একটা ব্যবহার নেই। মাত্র ১০-২০ শতাংশ মানুষ এই পেশী সঞ্চালনের মাধ্যমে তাদের কান নড়াতে সক্ষম।
আতঙ্কিত হলে যে পেশী সঞ্চালিত হয়: আমরা আশ্চর্য হলে বা ভয় পেলে আমাদের লোমের গোড়ায় থাকা বিশেষ এক ধরনের পেশী সঞ্চালিত হয়। সাধারণত অতি মাত্রায় বিস্মিত হলে বা ভয় পেলে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাওয়া বা গায়ে কাটা দেয়ার যে ঘটনা ঘটে তা এই পেশীর সঞ্চালনার ফলেই হয়ে থাকে। মানুষের দেহে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় লোম কম থাকায় লোমের গোড়ায় এক ধরনের শিহরণ দেখা যায়।
মেসেনটারি: বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত মানবদেহের নানান অংশ খুঁজে বের করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে গবেষকগণ শারীরবিজ্ঞান বইতে মানবদেহের নতুন এক অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মেসেনটারি নামক এই অঙ্গ পেটের হজমক্রিয়া সম্পাদনের জায়গায় দুই ভাঁজওয়ালা গহŸর হিসেবে উপস্থিত থাকে। প্রথমে ধারণা করা হতো এটি কোনো অঙ্গের অংশ কিন্তু পরে দেখা যায় এটি একটি একক অঙ্গ। বিজ্ঞানীরা এই অঙ্গটির সঠিক ভ‚মিকা সম্পর্কে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারেননি, তবে এটি পাকস্থলীর অন্ত্রের সঙ্গে তলপেটের সংযোগ রক্ষা করে।
চোখের কর্নিয়ার বিভিন্ন স্তর: ২০১৩ সালে একদল চক্ষুগবেষক চোখের কর্নিয়া সম্পর্কিত নতুন এক তথ্য বের করেন। তারা জানান, মানুষের চোখের কর্নিয়া অংশে মোট ৬টি স্তর আছে। এটি ‘ডুয়া স্তর’ নামে নামকরণ করা হয়। প্রতিটি স্তর এক ইঞ্চির ১০ হাজার ভাগের এক ভাগের চেয়েও ক্ষুদ্র।
মানবভ্রƒণের লেজ: মাতৃদেহে থাকা অবস্থায় মানবভ্রƒণে লেজের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যা ভ্রƒণ সৃষ্টির ১০ সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহের ভেতরে এই লেজের মতো অংশ আজীবন উপস্থিত থাকে। কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনায় মানবশিশু এই লেজের ন্যায় অংশ নিয়েই জš§ নেয়, যা পরবর্তীতে সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা সম্ভব।
মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধকারী অংশ: ২০১৫ সালে একদল গবেষক মস্তিষ্কের এমন কিছু অংশ খুঁজে পান, যা সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত। আলঝেইমারস এবং অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধের চেষ্টায় এ গবেষণা নতুন দিক উšে§াচন করে।
জ্যাকবসন অঙ্গ: বিজ্ঞানীরা গবেষণায় পেয়েছেন যে, স্তন্যপায়ী প্রাণীদের নাসারন্ধ্রে একধরনের অনুভ‚তিপ্রবণ অঙ্গ থাকে, যা ফেরোমনের উপস্থিতি জানান দিতে ব্যবহƒত হয়। আবিষ্কারকের নামানুসারে এই অঙ্গের নাম দেয়া হয় ‘জ্যাকবসন অঙ্গ’। মানবদেহে এই অঙ্গ আছে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে মানবভ্রƒণ মাতৃদেহে থাকা অবস্থায় এই অঙ্গ ভ্রƒণে উপস্থিত থাকে যা জš§ানোর পরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নাসারন্ধ্রে গুটির ন্যায় একধরনের অংশ থাকে যা আসলে জ্যাকবসন অঙ্গ, তবে সেখানে কোনো অনুভ‚তি স্নায়ু থাকে না।