বিএনএ,ঢাকা: ভাতা বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে ফের সড়ক অবরোধ করেছেন এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা অবৈতনিক প্রশিক্ষণার্থীরা। এতে শাহবাগ এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কগুলোতে তৈরি হয় তীব্র যানজট।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা।
প্রশিক্ষণার্থী সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা কার্যক্রম ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়। প্রথমে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। পরে তা বাড়িয়ে ২০ হাজার এবং পরে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। তবে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চিকিৎসকদের সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক ১৭টি গ্রুপ বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু করে। শুরুতে তারা অসহিংস আন্দোলন করে ও সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন।
সূত্র জানায়,এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ও মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম একাধিকবার ১৭টি গ্রুপের সাথে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় ভাতা বৃদ্ধিতে সরকারকে সময় দেওয়ার কথা উঠে আসে। সেখানে ১৬টি গ্রুপ সরকারকে সময় দেয়ার পক্ষে থাকলেও ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস আগ্রাসী ভূমিকায় যায়। তারা সব আলোচনা বাদ দিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর কর্মবিরতি দিয়ে বিএসএমএমইউ’র বটতলায় অবস্থান নেন। পরে শাহবাগ আবরোধ করেন। পরবর্তীতে ২২ ডিসেম্বরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান ভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনার জন্য আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মধ্যে ১০ জনের দল ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ২ জনকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠান। অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ ২ ঘণ্টার আলোচনায় আন্দোলনরতদের সরকারের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। তাদের জানানো হয় দিনের মধ্যে ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। কিন্তু আন্দোলনকারী ডা. জাবির হোসেন, ডা. নুরন্নবী, ডা. পারছাসহ অন্যান্যরা কোনভাবেই রাজী ছিলেন না। সে মিটিংয়েই স্বাস্থ্য সচিব, অর্থ সচিবকে ফোন করেন। কিন্তু অর্থ সচিব ঢাকার বাইরে থাকায় প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। এতে জাবিরের নির্দেশে চিকিৎসকরা শাহবাগে আন্দোলন শুরু করেন। এতে বিএসএমএমইউয়ের ভিসি অধ্যাপক শাহীনুল আলম তাদের আন্দোলন ২ দিনের জন্য বন্ধ রাখার অনুরোধ করেন। কিন্তু তার সাথেও জাবিরের নেতৃত্বে অন্যরা খারাপ আচরণ করেন। ২ দিন পর ২০ শতাংশ ভাতা বৃদ্ধি করে ৩০ হাজার করা হলেও তারা আন্দোলন বন্ধ না করে- ৫০ হাজার টাকা দাবি করে মহাসমাবেশ ডাকে। আজকে সকালে তারা প্রথমে বিএসএমএমইউর বটতলায় একত্রিত হয়। পরে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।
ক্যাডার চিকিৎসকদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা বেসরকারি ট্রেইনি চিকিৎসকদের ৫০ হাজার টাকা ভাতা বৃদ্ধি বা ৯ম গ্রেড দাবির সাথে একমত না। তারা বলছেন, বিসিএস পরীক্ষার কঠিন প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে যে বেতন পান তা বেসরকারিরা দাবি করতে পারেন না। ক্যাডার চিকিৎসকদের ২ বছর গ্রামে থাকতে হয়। তাদের চাকরির বেশিরভাগ সময় গ্রামে কাটে। তাদের ও বেসরকারি ট্রেইনিদের বেতন এক হলে বৈষম্য হবে। যদি বেতন একই হয় তাহলে তাদেরকেও ২ বছর গ্রামে থাকতে হবে। কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা ২ বছর পরে দিতে হবে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আওয়ামী লীগের চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-র সাথে জড়িত। ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সভাপতি জাবির হোসেনের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। এবছরের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বর কেন্দ্রিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি স্ট্যাটাস দেন, যা পুরো রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক। এছাড়া সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হাবিবুর রহমান সোহাগ স্বাচিপের কমিটিতে আছেন। ছাত্রলীগের এ নেতা সিরাজগঞ্জ জেলা স্বাচিপের কমিটির অর্থ সম্পাদক। এ আন্দোলনে পেছনে থেকে সহায়তা করছেন স্বাচিপের আরেক নেতা ডা. নিরুপম দাশ। তাদের সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএনএনিউজ/ আরএস