বিএনএ, ঢাকা : রাজধানীতে ফার্নিচারের একজন ব্যবসায়ী ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে গত মার্চ মাসে বিক্রয় দেখিয়েছেন ৩৩ হাজার টাকা। অথচ ওই মাসে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত বিক্রি হয়েছিল ৩৩ লাখ টাকা। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বলছে, একজন কাস্টমারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্যাট গোয়েন্দা সহকারী পরিচালক মাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল সোমবার রাজধানীর পশ্চিম কাফরুলের জৈনপুর ফার্নিচার নামক ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়।
প্রতিষ্ঠানটি মার্চ মাসে করোনার অজুহাতে দোকানে বিক্রয় নেই বলে ভ্যাট সার্কেলকে জানিয়েছিল। ডাবল অ্যাকাউন্টিং’ এর পার্থক্যের এই চিত্র দেখে গোয়েন্দারাও বিস্মিত হয়। কারণ ওই সময়ে করোনার ছোবলের আঘাত ছিল।
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিযোগ করেন, তিনি ঐ দোকান থেকে ফার্নিচার কিনেছেন। কিন্তু তাকে ভুয়া ভ্যাট চালান দেয়া হয়। পরে তার সন্দেহ হলে তিনি ভ্যাট গোয়েন্দার নিকট অভিযোগ করেন।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, মিরপুরের রোকেয়া স্মরণীতে প্রায় এক বিঘা জায়গার উপর গড়ে ওঠা সুদৃশ্য এই ফার্নিচারের দোকান বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। ওই দোকানের ভাড়া সাড়ে ৪ লাখ টাকা। শোরুমে ফার্নিচার অতি উন্নত মানের ও দামি ব্রান্ডের।
অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধিত হলেও ভুয়া ও ডুপ্লিকেট চালান ব্যবহার করে ফার্নিচার বিক্রয় করছে। ভ্যাটের জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টস সংরক্ষণ করছে।এতে স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে প্রকৃত বিক্রয় গোপন রেখে নামমাত্র বিক্রির তথ্য ঘোষণা করছে।ফলে কাস্টমার থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না।
অভিযানকালে ফার্নিচারের দোকান থেকে ব্যবসায়ীর বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করে গোয়েন্দারা।এতে দেখা যায়, কেবল চলতি বছরের মর্চে তাদের প্রকৃত বিক্রয় ছিল ৩৩ লাখ টাকা। কিন্তু তারা মিরপুর সার্কেলে রিটার্নে দেখিয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার টাকা। অপ্রদর্শিত বিক্রয় ৩২লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এই বিক্রয় হিসাব গোপন করার কারণে এক মাসেই ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। গোয়েন্দারা অন্যান্য মাসের অনুরূপ তথ্যও উদঘাটন করেছে।
অনুসন্ধান করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, জৈনপুর ফার্নিচার মার্চে করোনার কারণ দেখিয়ে বিক্রয় কম প্রদর্শন করেছে। অথচ ওই মাসে তাদের প্রকৃত বিক্রয়ের প্রায় ৯৯ % গোপন করেছে।ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যেই এই তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
এদিকে গোয়েন্দা দলটি শেওড়াপাড়ার এলাকার হোমউড ফার্নিচার নামক অপর একটি ফার্নিচার দোকানেও অভিযান চালায়। ওই প্রতিষ্ঠানেও হিসাব গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের প্রকৃত বিক্রির তথ্য উদ্ধার করা হয়।সেখানে দেখা যায় যে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভ্যাট অফিসে বিক্রয় দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ২৫ ও ৬৪ হাজার টাকা। কিন্তু ওই দুই মাসে প্রকৃত বিক্রি হয়েছে ৪ লাখ ও ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, ডাবল অ্যাকাউন্টিংয়ের মাধ্যমে এই দুটো ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকির সাথে জড়িত হওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জব্দকৃত দলিলাদি আরো যাচাই করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে তাদের উভয়ের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। আরো তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে ভ্যাট গোয়েন্দা।
বিএনএনিউজ/ এসকেকে/ এইচ.এম।