গোপালগঞ্জের অল্প বয়সের এক কর্মী শহিদুল ইসলাম গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩২৭
আধা ঘণ্টা পরে গাড়ি এসে হাজির। অনেক লোকই বাড়িতে ছিল, গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে অনেকেই অন্ধকারে পালিয়ে গেছে। আমি গাড়িতে উঠে রওয়ানা করলাম। গোপালগঞ্জের অল্প বয়সের এক কর্মী শহিদুল ইসলাম গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছিল। আমি গাড়ি থেকে নেমে তাকে আদর করে বুঝিয়ে বললাম, “কেন কাঁদিস, এই তো আমার পথ। আমি একদিন তো বের হব, তোর ভাবীর দিকে খেয়াল রাখিস।”
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে আমাকে নিয়ে আসা হল। তিনি বসেই ছিলেন, আমাকে বললেন, “কি করব বলুন! করাচি আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমরা তো জানি আপনাকে খবর দিলে আপনি চলে আসবেন। জেলের ভয় তো আপনি করেন না।” তাঁর কাছে অনেক টেলিফোন আসছিল, আমার আর তাঁর কামরায় থাকা উচিত না। তাঁকে বললাম, “আমাকে জেলে পাঠিয়ে দেন। খুবই ক্লান্ত, গতরাতেও ঘুম হয় নাই প্লেনে।”
তিনি আমাকে পাশের রুমে নিয়ে বসতে দিলেন। ইদ্রিস সাহেব তখন ঢাকার ডিআইজি। তিনি আসলেন, আমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করলেন। সিগারেট বা অন্য কিছু লাগবে কি না জানতে চাইলেন। আমি তাঁকেও বললাম, তাড়াতাড়ি জেলে পাঠিয়ে দিলেই খুশি হব। তিনি চলে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরে একজন ইন্সপেক্টর এসে একটা ওয়ারেন্ট তৈরি করতে লাগলেন। একটা মামলা আমার নামে করা হল; তাতে দেখলাম, ডাকাতি ও খুন করার চেষ্টা, লুটতরাজ ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, আরও কতগুলি ধারা বসিয়ে দিলেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ‘ডিভিশন’ লিখে দিলেন। আমি রাত সাড়ে বারোটা কি একটা হবে, জেলগেটে পৌঁছালাম। দেখি, আমিই একলা আর কাউকেও আনা হয় নাই। কয়েক মিনিট পরে দেখলাম, মির্জা গোলাম হাফিজ আর সৈয়দ আবদুল রহিম মোক্তারকে আনা হয়েছে। তিনজনকে দেওয়ানি ওয়ার্ডে রাখা হল।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭১-২৭২।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩২৬