বিএনএ, কক্সবাজার : পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।৬০ শতাংশ ছাড়ের আশায় তিন দিনের ছুটি ও সাত দিনের পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন তিন লক্ষাধিক পর্যটক। কিন্তু হোটেল সমূহের বাস্তব চিত্র উল্টো।ছাড়ের বালাই নেই কোথায় ও। আর যারা ছাড় দিচ্ছেন তারা পূর্বের রেইট থেকে দ্বিগুন বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন অভিযোগ করেছেন অনেক পর্যটক। পর্যটন মেলা, বীচকার্নিভল ও সৈকতে নেমে গোসলে মেতেছেন অনেকেই। কেউবা ঘুরে ঘুরে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ এসেছেন পরিবারসহ, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা।
এ দিকে পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী চলছে পর্যটন মেলা ও কার্নিভাল। মেলা উপলক্ষ্যে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ এবং রেস্তোরাঁয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এসব ছাড়ের প্রলোভনে কক্সবাজারে এসে হতাশ হয়েছেন অনেক পর্যটক।
তাদের অভিযোগ, বিশাল ছাড়ের খবর পেয়ে তারা কক্সবাজার এসেছেন। কিন্তু কোথাও ছাড় দিচ্ছে না। ছাড়ের কথা বললে রুম ভাড়া দিতেই রাজি হচ্ছে না। একই অবস্থা খাবার হোটেলেও। বাড়িয়ে দিয়েছে মাছ মাংস তরিতরকারিসহ ভাতের দাম। এক কথায় প্রতারণার শিকার হয়ে বিপাকে পড়েছেন আগত পর্যটকরা।
ঢাকার সাঈদাবাদ থেকে আসা পর্যটক রাহেলা , অমিত, ও প্রমীথ বলেন, পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজার থাকার হোটেল ও খাবারসহ সব কিছুতে ছাড় দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেটি দেখে আমরা ছুটি উপভোগ করতে বন্ধুরা মিলে এসেছি। তবে যে হোটেলে উঠেছি সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া। কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। এমনকি কোন কোন হোটেল অতিরিক্ত ভাড়াও চার্জ করছে।তার পর কোন হোটেল খালি নেই।রুম না পেয়ে অনেকে বাসাবাড়িতে। কক্সবাজার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন,চাকুরির সুবাদে কক্সবাজার আসতে হয়েছে। এখানে এসে দেখি প্রটোকল দিতে গিয়ে আসল কাজ নানা ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।অনেকে রাত ১২ টার পরে ও রেষ্ট হাউসে রুম পাওয়া যাবে কীনা মুঠোফোনে কল দেন।
চাঁদপুর থেকে আগত পর্যটক ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন আহমেদ বলেন, আজ সকালে কক্সবাজার এসেছি। বিচ ভিউ নামক একটি হোটেলে রুমের জন্য যাই। প্রথমে বলে রুম নেই। পরে একজন লোক এসে বলে রুম আছে তবে তিন হাজার টাকা দিতে হবে। পরে খাবার হোটেলে গিয়ে দেখলাম সেখানেও কোনো প্রকার ছাড় নেই। এসব লোভ দেখানো ছাড় বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক।
হোটেল মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। ইতোমধ্যে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। ছাড়ের বিষয়টি কেউ মানছেন, আবার কেউ মানছেন না। শতভাগ মানাতে তারা প্রশাসনের আরও নজরদারি প্রত্যাশা করেন।
হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, আমার হোটেলে ৬০ শতাংশ ছাড় দিয়েছি। আপনারা চাইলে আমার হোটেলে যারা আছেন তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোনো নিয়ম মানছেন না।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, আমাদের সমিতির যত হোটেল আছে তারা নিয়ম মেনে ছাড় দিচ্ছেন। তবে কিছু হোটেল ছাড় দিচ্ছে না। এজন্য প্রশাসনের মনিটরিং দরকার।
হোটেল ব্যবসায়ী বজল আহমদ বলেন, বেশ কয়েকমাস তাদের মন্দা কেটেছে। তার মধ্যে মেলা উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনকে চাঁদা দিতে হয়েছে। তাই এই টাকা তুলে নিতে ছাড় দিতে পারছি না।
তবে জেলা প্রশাসনের দাবি- হোটেল রেস্তোরাঁসহ যে সকল খাতে ছাড় দেওয়া হয়েছে সেটি যথাযথভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে আলাদা টিম কাজ করছে। কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাঁচ শতাধিক হোটেলে প্রায় দুই পর্যটক রাখা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যটক এসেছে প্রায় তিন লক্ষাধিক তাই সুযোগ বুঝে প্রায় হোটেল অতিরিক্ত ভাড়াও চার্জ করছে। ছাড়ের কথা বললে রুম খালি নাই বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে।তবে যে সব পর্যটক দূরদূরান্ত থেকে আগে থেকে বুকিং দিয়ে এসেছেন তারা পাচ্ছেন ছাড়ের বাড়তি সুবিধা।
এমন একজন পর্যটক গাজীপুরের নবাব আলী পেশায় শিক্ষক, তিনি বলেন, স্বপরিবারে এসেছেন উঠেছেন সী ওয়াল্ড হোটেলে তিনটি রুম তিনি এক সপ্তাহ আগে ৬০ শতাংশ ছাড়ে ভাড়া নিয়েছেন। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং। অনেকে ছাড়ের সুবিধা ভোগ করলে ও ৮০ শতাংশ পর্যটককে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।অনেক হোটেল মালিক বাড়তি ভাড়া আদায় করলে ও কাগজে কলমে ছাড় লিখে রাখছেন। যাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে পারেন।
কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দজাদী মাহবুবা মঞ্জুর মৌনা বলেন, আমরা যে ছাড়ের কথা বলেছি সেটা কার্যকর করার জন্য আমাদের আলাদা টিম কাজ করছে। যদি আপনাদের কাছে কোনো হোটেল ছাড় দিচ্ছে না- এই রকম কোনো তথ্য থাকলে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা ওই হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।রুমের যেহেতু সংকট চলছে এ মূহুর্তে অভিযোগ করে বাড়তি ঝামেলা যেতে চান না পর্যটকরা। গেষ্ট হাউস রেষ্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন,পর্যটকের সংকট থাকলে শতভাগ হোটেলে ছাড়ের সুবিধা ভোগ করতেন পর্যটকরা।শুধু তাই নয়, যানবাহনের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন গাড়ির মালিকেরা।খোঁজ নিয়ে জানাগেছে উড়োজাহাজের ভাড়া ও ঊর্ধ্বগামী।
বিএনএ/ এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, ওজি