ঢাকা: টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নজিরবিহীন রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটে। একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের জায়গায় আরেকটি কর্তৃত্ববাদী শাসন যেন না আসে সেদিকে নজর দিতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণ হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ছাত্র-জনতার মূল প্রত্যাশা একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার উপযোগী রাষ্ট্রকাঠামো ও পরিবেশ তৈরি করা।
তিনি বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে সেসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বিগত সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি বলে অর্থ ফেরত আসেনি।
বুধবার(২৮ আগস্ট) বিকেলে ‘নতুন বাংলাদেশ: গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক । রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য একই ব্যক্তি যেন একইসঙ্গে সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী), দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা থাকতে না পারেন সেই প্রস্তাব দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেইসঙ্গে একজন ব্যক্তি যেন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন সেই প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া স্পিকারকে সংসদের অভিভাবক হিসেবে দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের (অনাস্থা প্রস্তাব ও বাজেট ছাড়া) সমালোচনা করা ও দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া এবং রাজনৈতিক দলে দলীয় প্রধানের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও পরিবারতন্ত্র বিলোপ করার প্রস্তাব দিয়েছে টিআইবি।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। এই রূপরেখায় দলীয় প্রধানের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও পরিবারতন্ত্র বিলোপ করতে হবে এবং দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে তরুণ, নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিচার বিভাগে আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ ক্ষমতায়িত নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন ও কার্যকর করতে হবে। উচ্চ ও অধস্তন আদালতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বাধীন সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে বিচারপতি অপসারণের এখতিয়ার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার জন্য ঢেলে সাজাতে হবে।
বিএনএ,এসজিএন