বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা মিউকরমাইকোসিসে (কালো ছত্রাক) আক্রান্ত নারীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) আক্রান্ত নারীর মেয়ে বলেন, গত ২৫ জুন তার জ্বর আসে। ৩ জুলাই পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। পরে ১৫ জুলাই পরীক্ষায় তিনি কোভিড নেগেটিভ হন। তবে এরপর তার নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ২৪ জুলাই তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
আক্রান্ত নারী ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন বলে তাঁর মেয়ে জানিয়েছেন। মায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তাঁর দাঁতব্যথা হয়। এরপর মুখ ফুলে যাচ্ছিল। পরে চোখ ও চোখের আশপাশের জায়গায় লালচে কালো হয়ে যাচ্ছিল। তখন একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তাঁরা। ওই চিকিৎসক তাঁর মায়ের সিটি স্ক্যান করতে দেন। রিপোর্ট আসার পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলে ধারণা করেন চিকিৎসকেরা। পরে ২৪ জুলাই মাকে চট্টগ্রামে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মায়ের বায়োপসি করতে দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে আসা রিপোর্টে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়েছে। আরও অধিকতর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করার আগের দিন ২৩ জুলাই তাদের বাবা করোনায় মারা গেছেন। এখন ওষুধের অভাবে মাকে বাঁচানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইনজেকশনটি সোমবার থেকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা চেষ্টা করে এখনো ওষুধ পাইনি। দিনে ৫ ভায়াল করে ১৪ দিন নাকি দিতে হবে এই ওষুধ। ডাক্তাররা সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেছেন, একটি অস্ত্রোপচার লাগবে। মায়ের নাক, মুখ ও চোখে এই অস্ত্রোপচার হবে, যাতে পুনরায় নতুন জায়গায় ফাঙ্গাস না ছড়ায়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুযত পাল বলেন, ‘একজন রোগী পাওয়া গেছে। তবে এখনই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বলা যাবে না। আমরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সাসপেকটেড হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছি।’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেশে আগে থেকেই ছিল। গোবরে, আকাশে, বাতাসে ছত্রাকটি আছে। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন স্থান থেকেও এটা হতে পারে। খুবই ছোঁয়াচে একটা রোগ এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার ৫০ থেকে ৫৪ শতাংশ। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
এক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আইসিইউতে এই ওষুধ বেশি ব্যবহার হয়। এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার রোগী, কিডনি রোগী ও এইডস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। করোনার আক্রান্ত রোগীর ওপর স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বেশি প্রয়োগ করা হয়। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেজন্য ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে।
বিএনএনিউজ/মনির