সাভার প্রতিনিধি: আশুলিয়ায় আলোচিত খাদেম নজরুলের পায়ের রগ কাটা মামলার প্রধান আসামী কিশোর গ্যাং ‘রাকিব গ্রুপ’ এর প্রধান রাকিব ও সহযোগী ইমনকে সাভার ও আশুলিয়া থেকে বিদেশী পিস্তল, দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
সোমবার (২৮ জুন) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন সিপিসি-২ র্যাব-৪ এর কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার বিএন রাকিব মাহমুদ খান। খাদেমের পায়ের রগ কাটার সংবাদটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রচার হলে দেশব্যাপী ব্যাপক ভীতি ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরই পাশাপাশি এলাকার লোকজন কিশোর গ্যাং প্রধান রাকিব ও ইমনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জোরালোভাবে মিটিং মিছিল এবং মানববন্ধন করে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৪ উক্ত ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
র্যাব জানায়, ২৮জুন ভোর তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সাভারের হেমায়েতপুর এবং আশুলিয়ার নাল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০২ টি পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০৪ রাউন্ড গুলি, ০১ টি চাইনিজ কুড়াল, ০২ টি ফোল্ডিং চাকু ০১ টি চাপাতি এবং ৩০০ পিস ইয়াবাসহ এজাহারভুক্ত প্রধান দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। এরআগে, ২৪ জুন আশুলিয়ার নাল্লাপাড়া এলাকায় মসজিদের খাদেম মোঃ নজরুল ইসলাম তার ঋণের ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করার জন্য সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আশুলিয়ার নৈহাটি মসজিদের পাশে আলিমের ইন্ধনে কিশোর গ্যাং রাকিব গ্রুপের লিডার রাকিব হোসেন ও তার সহযোগী ইমন হোসেন ধারালো চাপাতি ও চাকু নিয়ে খাদেমের পথ রোধ করে এলোপাথারিভাবে জখম করে।
এক পর্যায়ে রাকিব হোসেন তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্য খাদেমের মাথায় কোপ দিলে ভিকটিম প্রাণ রক্ষার্থে সরে গেলে কোপ ভিকটিমের বাম পায়ের গোড়ালিতে লেগে রগ কেটে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আসামী রাকিব ও ইমন তাদের হাতে থাকা ছোড়া দিয়ে ভিকটিমের পায়ের রগ কাটাসহ শরীরের বিভিন্ন যায়গায় গুরুতর জখম করে। আসামী রাকিব হোসেন খাদেমের সাথে থাকা ত্রিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। খাদেমের ডাক চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীদ্বয় প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন এসে মসজিদের খাদেম নজরুলকে সাভারের নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যায়।
এঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী আশুলিয়া থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৫৩, তারিখঃ ২৫-০৫-২১, দন্ডবিধির-১৮৬০ এর ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩৭৯, ৫০৬ ধারা।
এ বিষয়ে সিপিসি-২ র্যাব-৪ এর কোম্পানি অধিনায়ক লে. কমান্ডার বিএন রাকিব মাহমুদ খান বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে বহুল আলোচিত বিপদগামী কিশোর গ্যাং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী, চাদাবাজী, ছিনতাই, নারীদের ইভটিজিংসহ মাদক সেবন ও ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে। এ ধরনের বিপথগামী কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট রয়েছেন।
কিশোর গ্যাং
ইমনসহ রাকিবের নেতৃত্বে ১০/১২ জনের কিশোর গ্যাং সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ইভ-টিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এলাকার নিরীহ জনগণ অতিষ্ট এবং সর্বদা আতঙ্কের মাঝে থাকতো। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। তারা জানায় যে, গত ২৪মে ভিকটিমের পায়ের রগ কেটে গুরুতর জখম করে এলাকায় আত্মগোপন করে। অতঃপর তারা আত্মগোপনে থেকে গত ২৮মে ঢাকা হয়ে কক্সবাজার চলে যায়। কক্সবাজারে তারা দীর্ঘ ১ মাস আত্মগোপনে ছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব জানায়, সে পলাতক আসামী আলিমের ইন্ধনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বামপায়ের গোড়ালিতে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত কাটা জখম করে এবং মসজিদের খাদেম নজরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সে ভিকটিমের সাথে থাকা ত্রিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
অপর আসামী ইমন জানায়, সে ভিকটিমকে তার সাথে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে ডানপায়ের উরুতে পোচ দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। গ্রেফতারকৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। পলাতক আসামীদেরকে গ্রেফতারে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
বিএনএ, ইমরান খান,