18 C
আবহাওয়া
৯:০৩ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সদা প্রস্তুত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

বিএনএ ডেস্ক: বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৯ মে) সকালে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তি ও শান্তির দূত। বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য জীবন উৎসর্গ এবং স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করেছিলেন বলে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার’-এ ভূষিত করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সব সময় চায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। যুদ্ধ না, আমরা শান্তি চাই। সংঘাত না, আমরা উন্নতি চাই। জাতির পিতার শান্তি সেনানীরূপে ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়। আজ আমরা ‘সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ’ হিসেবে গৌরবের ৩৪ বছর উদযাপন করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মিশনে কার্যকর অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অবস্থানকে সুসংহত করেছে। একইসঙ্গে সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়াও, শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিগুলো নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা অপারেশনে এই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমরা আমাদের শান্তিরক্ষীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রস্তুত করে তুলছি। ‘পিপল পিস প্রোগ্রেস: দ্য পাওয়ার অব পার্টনারশিপ’ ২০২২ সালের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্যকে আমরা সামনে রেখে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবে সেই অঙ্গীকার আমরা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর তরুণ সদস্যরা ২১ শতকের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। এ মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২২১টি দেশের ৭৫ হাজার ৫১৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৮২৫ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের ১১৯ জন নারী শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। আমি জেনে আনন্দিত যে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী তাদের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে চলেছে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নিজেই বিশেষভাবে আমাকে বলেছেন, তিনি আরও বেশি নারী সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনের চান। আমি বলেছি, আমরা সব সময় প্রস্তুত।

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২

শেখ হাসিনা জানান, আমাদের শান্তিরক্ষীরা ৩৪টি দেশে ৫৫টি মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৯টি মিশনে আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিভিন্ন মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দাযিত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা বর্তমানে জাতিসংঘের পিস-বিল্ডিং কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে শহীদদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তিনি বলেন, আপনজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, কত নির্মম তা আমি জানি। বলেন, এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের সর্বমোট ১৬১ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন। এ বছর ২ জন শহীদ শান্তিরক্ষী পরিবার এবং ১৪ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হলো। আমি তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২২

বাংলাদেশ সব সময়ই শান্তির পক্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘে আমাদের উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তখন থেকে প্রতি বছর এটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে পিস কিপিং অপারেশন ট্রোনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে ২০০২ সালে এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, বিপসট’ হিসেবে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটের মর্যাদা পায়। বিশ্বে এটি বর্তমানে শান্তিরক্ষীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে এই ইনস্টিটিউট স্থাপন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনে আরও শান্তিরক্ষী পাঠাতে আমরা প্রস্তুত। বিশ্ব করোনাভাইরাসের মতো মহামারি অতিক্রম করতে করতে আরেকটা যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে, যা আজকে বিশ্বে অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই, সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক সেটাই আমাদের কাম্য।

বিএনএ/ এ আর

Loading


শিরোনাম বিএনএ