বিএনএ, ডেস্ক : ফারাজ করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও ব্যারিস্টার ইজওনা ইউসূফের বড় সন্তান । ফারাজ করিমের দাদা একেএম ফজলুল কবির চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের চেয়ারম্যান। নানা ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার এ. আর ইউসূফ।
ফারাজের জন্ম ঢাকায়। শিক্ষাজীবনের প্রাথমিক পর্ব করে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান লন্ডন। ভর্তি হন কিংস কলেজে। ২০১৩ সালে কিংস কলেজ থেকে আন্ডার গ্রাজুয়েট শেষ করে ২০১৫ সালে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে দেশে আসেন ফারাজ করিম চৌধুরী। জড়িত হন বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে। ব্যতিক্রমী চিন্তা, আদর্শ ও গণমুখী আনপ্যারালাল কিছু কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অল্প দিনের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
যেখানে অন্যায়, দুর্যোগ সেখানেই ফারাজ করিম। করোনাকালীন সময়ে দেশের অনেক অর্থশালী ব্যক্তিরা যখন নিজেদের লুকিয়ে রেখেছিলনে তখন মানবতার দূত হিসাবে উপস্থিত হন ফারাজ। শুধু রাউজান নয়- চট্টগ্রাম শহরে ভাসমান মানুষ ও হাসপাতালের ডাক্তার- নার্সসহ হাজার হাজার মানুষকে নিরবিচ্ছন্নভাবে রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন। কেউ ফোন করলেই পাঠিয়ে দিয়েছেন খাদ্য ও অন্যান্য প্রযোজনীয় সামগ্রী। শুধু করোনাকালীন নয় টেকনাফ উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছে ট্রাকে ট্রাকে খাদ্য পাঠিয়েছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় সহায় সম্বল হারা মানুষকে শুধু খাদ্য সহায়তা করে ক্ষান্ত হয়নি। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ৩৫০টি, কুড়িগ্রামে ১৫০টি ও নেত্রকোনায় ১টি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যাতে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবানির দিন যাতে অন্তত: একবেলা যেন ভাল খেতে পারে যে জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে একশত গরু কোরবানি করে ১০ হাজার পরিবারের কাছে মাংস পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দিতে ব্যবসায়িদের অক্ষত পোষাক কিনে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের উদ্যোগে ব্যতিক্রমী এক মেলার আয়োজন করে সমাজসেবক ফারাজ করিম চৌধুরী। দূতাবাসগুলোতে কাজ করা বিদেশি নাগরিকরা ন্যুনতম পাঁচশ’ টাকায় যে কোনো পোশাক কেনার সুযোগ পান। পোশাক বিক্রির পুরো টাকা বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দান করেন তিনি।
ফারাজ করিম শুধু দেশে মানবতার হাত বাড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি। স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ফারাজ করিম চৌধুরী অন্তত: ৩ কোটি টাকার বিভিন্ন সামগ্রী পাঠিয়েছেন।
ইসরাইলী হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য ফিলিস্তিন দূতাবাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ওষুধ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রমাদানের নিকট হস্তান্তর করেন ফারাজ করিম চৌধুরী। এর আগে একটি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে ছিলেন ফারাজ। কিন্তু যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন বোমা বিধস্থ হয় এম্বুলেন্সটি।
ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ ফারাজ নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দেশ বিদেশে মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত তরুন রাজনীতিক অসাধারণ এই মানুষটি অতি সাধারণভাবে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান-১ সংলগ্ন মহাখালীর মসজিদ-এ গাউসুল আজমে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী বিয়ে করেন ফারাজ করিম। এর আগে তিনি বলেছিলেন চট্টগ্রামে প্রচলিত রীতি-নীতি অনুযায়ি বিয়ে করবেন না। তিনি যুগ যুগ ধরে চলে আসা ‘অচলায়তন’ ভাঙ্গতে চান। কুপমন্ডকতা থেকে বেরিয়ে ইসলামের শরীয়া মেনে খেজুর খেয়ে বিয়ে করেন ফারাজ।
তবে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার গুলশানের বাসভবনে একটি নৈশ ভোজের আয়োজন করা হয়। এতে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি , প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম রুমানা আলী, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তারণ্যের আইকন ক্রিকেটার ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক এলিটরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পহেলা মার্চ সন্ধ্যায় ফারাজ করিম চৌধুরী নববিবাহিত স্ত্রী আফিফা আলমকে নিয়ে চট্টগ্রামের রাউজান গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে যাবেন। এইদিন এলাকার সব এতিম ও হেফজখানায় মূখরোচক খাবারে ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্তত: ১০ হাজার মানুষের জন্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজন করেছে ফারাজ।
প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্মে কনে পক্ষ বরকে যৌতুক দেয়া এবং হাজার হাজার ভুরিভোজের আয়োজনকে অনুমোদন দেয় না। কিন্তু বাংলাদেশে যুগযুগ ধরে এমন ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে। এখানে বিয়ে মানে লাখ লাখ টাকা কাবিন, হাড়িপাতিল থেকে শুরু করে ফার্নিসার, নগদ টাকাসহ নানা যৌতুক প্রদান এবং কনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভরি ভরি সোনায় মুড়িয়ে দেয়া, হাজার হাজার মানুষকে নানা মূখরোচক খাবারের মাধ্যমে ভুরিভোজ করা আরও কত কী!
বিয়ের তথাকথিত এই রীতি-রেওয়াজ পূরণ করতে চট্টগ্রামের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর-কনে উভয় পক্ষ ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েন। তাছাড়া এই সব তথাকথিত সামাজিক প্রথা করতে ব্যর্থ হলে বর ও কনের পরিবারের মধ্যে এক ধরণের তিক্ততা ও অশান্তি দেখা দেয়। ফারাজ করিম সমাজের এমন ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা খুব কাছে থেকে এসব দেখেছেন। সেকারণে ইসলাম ধর্ম অনুমোদন করে না এমন অনৈসলামিক বিয়ে থেকে নতুন প্রজন্মকে বেরিয়ে আনতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় মানবতার ফেরিওয়ালা ফারাজ করিম চৌধুরী নিজে সাধারণ ও শরীয়া অনুয়ায়ি বিয়ে করেছেন। শিগগিরই তিনি অনৈসলামিক ও শরিয়া বিরোধী বিয়ে বয়কটের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের ডাক দিবেন।
বিএনএ/ সৈয়দ শাকিব, ওজি /এইচমুন্নী