বিএনএ বিনোদন ডেস্ক: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গণে যে সকল মুখ উজ্জ্বল হয়েছে, আলোকিত হয়েছে-তাদের উল্কাপাত শুরু হয়েছিল স্কুলে পড়াকালীন। রুপালি পর্দায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন স্কুলে পড়ার সময়ই। এ রকম আলোকিত ও গুণী অভিনেত্রীদের নিয়েই এই আয়োজন।
শাবানা
১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে তার চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটে। শাবানার প্রকৃত নাম রত্না, শাবানা তার চলচ্চিত্রের নাম, যা চিত্র পরিচালক এহতেশাম প্রদান করেন। তার ভালো নাম আফরোজা সুলতানা। শাবানা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার তাই ইতি ঘটে মাত্র ৯ বছর বয়সে। আর পর্দায় অভিষেক ১৫ বছর বয়সে। বলা যায় স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগেই চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন ১১বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেত্রী। শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।
ববিতা
১৯৬৯ সালে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্টে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় এবং ওই দিন তার মা মারা যান। তার কর্মজীবনের শুরুতে ভগ্নিপতি জহির রায়হানের পথ প্রদর্শনে চললেও পরে তিনি একাই পথ চলেছেন। ৭০ এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি গোটা দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ববিতা পড়াশোনা করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকোলে বড় বোন কোহিনুর আক্তার চাটনীর (সুচন্দা) চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে পরিবার সহ চলে আসেন ঢাকায়। গেন্ডারিয়ার বাড়িতে শুরু হয় কৈশোরের অবশিষ্টাংশ। চলচ্চিত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন না করলেও ববিতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরেজিসহ কয়েকটি বিদেশি ভাষায়। নিজেকে পরিমার্জিত করে তোলেন একজন আদর্শ শিল্পীর মাত্রায়।
রত্না
২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ‘কেন ভালোবাসলাম’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। সেলিম আজম পরিচালিত এ ছবিতে তিনি ফেরদৌসের বিপরীতে অভিনয় করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হন রত্না, কাজ করেন শীর্ষ নায়কদের সাথেও। কিন্তু চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার জোয়ার বইতে শুরু করলে নিজেকে গুটিয়ে নেন চলচ্চিত্র থেকে। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকল্যাণ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। নতুনভাবে চলচ্চিত্রে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন রত্না। দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন রত্না। তার বাবা মান্নান কবির একজন মুক্তিযোদ্ধা।
পূর্ণিমা
পূর্ণিমার চলচ্চিত্র জগতে পথচলা শুরু হয়েছিল জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে। তখন তিনি মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়েন। ড. তুহিন মালিক পরিচালিত ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ২০১০ সালে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ‘এ জীবন তোমার আমার’ দিয়ে। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে, তখন তিনি ক্লাস নাইনে পড়তেন।
শাবনূর
উইকিপিডিয়া অনুসারে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। ১৯৭৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন এই অভিনেত্রী। পারিবারিক ভাবে তার নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। পরে স্বনামধন্য নির্মাতা এবং তার মেনটর এহতাশেম তার নাম রাখেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ রাতের আলো। শাবনূরের পিতার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনি। শাবনূরের প্রথম চলচ্চিত্র ‘চাঁদনী রাতে’। তার বিপরীতে নায়ক ছিল সাব্বির। এই ছবিটি ব্যর্থ হয়। যা ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায়। শাবনূরের পড়াশোনা সম্পর্কে জানা যায় তিনি আইএ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তবে নায়িকা হিসেবে শুরুটা যে স্কুল পেরনোর আগেই ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পূজা চেরি
পোড়ামন ২ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন শিশুশিল্পী পূজা চেরি। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়েন পূজা। স্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই দুই ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন পূজা চেরি। এবার কলকাতার আদিত্যর বিপরীতে ‘নূরজাহান’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন। কলকাতার রাজ চক্রবর্তী প্রডাকশনের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় থাকছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া। আলোচিত মারাঠি ছবি ‘সাইরাত’ এর রিমেক ‘নূরজাহান’।
অমৃতা খান
অমৃতাও বাংলাদেশি অভিনেত্রী এবং মডেল। ২০০২ সালে মডেল ও নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি মিডিয়াতে প্রথম পা রাখেন। তিনি একটি নাটকেও কাজ করেছেন যার নাম ‘উনিশ বছর পরে।’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তার অবির্ভাব ঘটে রয়েল এবং অনিক দু’জন নতুন পরিচালকের যৌথ পরিচালনায় ‘গেইম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০১৫ সালের ২রা জানুয়ারি। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তিনি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ও লেভেলে পড়ছিলেন।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ