বিএনএ ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে সংকট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। আন্দোলনকে (জুলাই-আগস্ট) ভিন্ন দিকে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলমান। সংস্কৃতি বিবর্জিত এমন কিছু করা যাবে না, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
সভ্যতার ক্রমবিকাশে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে লেখক কবি শিল্পী সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এদেশের লেখক-শিল্পীদের কী ভূমিকা এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে কী তাদের করণীয়?
এ বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বৃহস্পতিবার(২৮ নভেম্বর ২০২৪ ) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এত দিন ধরে যে ত্যাগ, এত রক্তের স্রোত, এত মৃত্যু, সবকিছু ছাড়িয়ে কেমন যেন একটা অস্থির ও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হচ্ছে। আর এগুলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে পতিত ফ্যাসিবাদ এ অবস্থা তৈরি করছে। যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তারা কেন বিভাজনের পথে হাঁটছে, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় অসংলগ্ন কথা শুনলে শঙ্কিত হয়ে পড়তে হয় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, পুরো আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব আক্ষেপ করে বলেন, ৫৩ বছরেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন কতগুলো কাজ করছি, যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেছে।’
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দায়িত্বে এসেছেন। এ দায়িত্বকে দায়িত্বশীলভাবে পালন করতে হবে। জাতিকে সামনে রেখে পালন করতে হবে। এমন কোনো হঠকারী করব না যেন বিভাজনের পথে অথবা আবার অন্ধকারে চলে যাই।’ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা ন্যূনতম করে উচিত নির্বাচনে যাওয়া। অনেকে বলছেন নির্বাচনই তো গণতন্ত্র নয়। অবশ্যই তা নয়। কিন্তু নির্বাচন ছাড়া দৃশ্যমান গণতন্ত্রে ফেরাও অসম্ভব।
জাতি গঠনে কবি-লেখকদের বিভিন্ন সময়ের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় সেই ভূমিকা সেভাবে দেখা যায়নি। ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল। যোগ্য মানুষেরা কথা বলতে পারেননি, লিখতে পারেননি। এখন লেখকদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। জাতীয় কবিতা পরিষদের মাধ্যমে তারা সত্য ন্যায়ে ও মানুষের কথা তাদের জাগ্রত কলমে প্রতিধ্বনিত হবে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান বলেন, ‘যদি কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার ফিরে আসার পাঁয়তারা করে তবে কবি শিল্পীরা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করবে।
সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সংস্কৃতি হলো লক্ষ্য, রাজনীতি হলো মাধ্যম। পরস্পরের সাথে নিবিড় সম্পর্ক আছে। পনেরো বছরের সংক্ষুব্ধ মানুষের আন্দোলনের ফসল এই গণঅভ্যুত্থান। জনগণ এর নায়ক।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, রাজনীতি নির্মিত হবে স্ব-উদ্যোগে, সংস্কৃতি অনুসরণের মাধ্যমে নিজেই বিকশিত হবে। উপদেষ্টাদের মধ্য যারা কিছুটা সংবিধান বোঝেন তারা নিজেরাই এখন মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, কবি-লেখক-শিল্পীদের স্বৈরাচার ব্যবহার করছে, বঙ্গভবনে দাওয়াত বা রাষ্ট্রীয় পদক কবি-লেখক-শিল্পীর চূড়ান্ত প্রাপ্তি হতে পারে না। মানুষের মুক্তির মাঝেই লেখার সার্থকতা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, শাসকের পরিবর্তন হয়েছে, রাষ্ট্রের ত্রুটি মেরামতের কাজ চলছে, জনআকাঙ্খা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শেখ হাসিনা লেখক-শিল্পী দখলের চেষ্টা করেছে, চাটুকার ও তাবেদার তৈরিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তার ভেতর থেকেও কিছু লেখক-কবি-শিল্পী সাহসিকতার সাথে জনআকাঙ্খার কথা বলেছে।
বিএনপি’র সহসভাপতি নূরুল ইসলাম মণি বলেছেন, সংস্কার চলমান, সরকারের সময়সীমা সীমাবদ্ধতার দেয়ালে ঘেরা। তাই গণতন্ত্রে ফিরতে হবে।
লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গার কর্মকাণ্ডে দেশে একটা অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। এ জন্য কবি-সাহিত্যিক-রাজনীতিক সবাইকে জাতীয় প্রশ্নে এক হতে হবে। কোনোভাবেই স্বৈরাচার প্রত্যাবর্তনের পথকে সুগম করা যাবে না। এ জন্য জনগণের ইচ্ছাকে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সেটা শুধু নির্বাচন নয়।
লেখক সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, লেখকসমাজ দুই ভাগে বিভক্ত, রাজ কবি ও জনতার কবি। আমরা চাই অর্গানিক কবি, যার কলম মাটি ও মানুষের কথায় উচ্চকিত সবসময়।
কবি সাংবাদিক হাসান হাফিজ বলেন, বিপ্লব সংজ্ঞা ধরে হয় না, সময়ের সাথে প্রেক্ষাপটও বদলায়। পার্শ্ববর্তী দেশের নকশা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শহীদুল্লাহ্ ফরায়েজি বলেন, ফ্যাসিবাদ পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া চলমান। কথা একটাই মানুষের জন্য রাষ্ট্র চাই, রাষ্ট্রের জন্য মানুষ চাই না।
লেখক সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, স্বৈরাচারের উত্থান চাই না। প্রলোভন ও নিপীড়ন দুটি থেকেই মুক্তি চাই।
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, আওয়ামী ঘরনার কবি-সাহিত্যিকের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। তারুণ্যের চাওয়ার পাওয়ার বাংলাদেশ চাই।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, দালাল কবিদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
কবি ও সম্পাদক শওকত হোসেন বলেন, শিল্প সংস্কৃতিই পারে পরিশুদ্ধ রাজনীতির উত্থান ঘটাতে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন- জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। স্বাগত বক্তব্য দেন এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন- জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যুগ্ম আহ্বায়ক কবি শাহীন রেজা।
সদস্যসচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, সময় নষ্ট করা যাবে না। তারুণ্যের উন্মাদনা দিয়েই দেশকে রক্ষা করতে হবে।
যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন রেজা সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে কবি লেখকদের সাহসী উচ্চারণ ও মনন বিনির্মাণের আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা বলে অনুষ্ঠানের সমাপনী টানেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কবি শ্যামল জাকারিয়া, কবি নুরন্নবী সোহেল, কবি এবিএম সোহেল রশিদ, কবি আসাদ কাজল, কবি রোকন জহুর, কবি কামরুজ্জামান, কবি নাজনীন সুমি প্রমুখ
বিএনএ/ওজি /এইচমুন্নী