বিএনএ, ডেস্ক : ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ হলো গ্রীক পুরাণের একটি কিংবদন্তী যা এমন একটি রূপক যা কৌতূহলের কারণে অনিয়ন্ত্রিত ঝামেলা বা দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। গ্রীক পুরাণে আছে, অলিম্পাস পর্বতের রাজা এবং আবহাওয়া বিষয়ক দেবতা জিউস প্যান্ডোরা নামে নারীর কাছে একটি জার বা বাক্স পাঠান এবং এটি খুলতে নিষেধ করেন। কিন্তু প্যান্ডোরার কৌতূহল চেপে রাখতে পারেননি। বক্সটি তিনি খুলে ফেলেন। যার ফলে রোগ, হিংসা, লোভ, এবং দুঃখ-কষ্ট পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। প্যান্ডোরা যখন বাক্সটি বন্ধ করে দেয়, তখন শুধু আশা বা ‘হোপ’ নামক একটি জিনিস ভেতরে থেকে যায়।

দর্শক বলছিলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) র কথা। জুলাইগণ আন্দোলন পরবর্তীতে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে অনেক ডাকডোল পিটিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি পৃষ্টপোষকতায় সৃষ্ট এই দলটির অবস্থা এখন হ-য-ব-র-ল। যতই দিন যাচ্ছে এনসিপি এবং দলটির নেতারা যেন চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে।
কয়েক মাস আগেও এনসিপির নেতাদের ডাকে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হতো, উপদেষ্ট, সচিবসহ দেশের নীতি নির্ধারকরা উঠবস করতো যাদের আঙ্গুলির হেলানিতে বাংলাদেশের সুর্ষ উঠতো আর ডুবতো, তারা এখন চরম অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে। রেজিস্টশনের জন্য মনোনীত হলেও দফায় দফায় বৈঠক, সভা-সমাবেশ থেকে হুমকি-দমকি দিয়েও নির্বাচন কমিশন থেকে কথিত সেই ‘আলাদিনের চেরাগ’ সাত রাজার ধন ‘শাপলা’ প্রতীক আদায় করে নিতে পারেনি। ইসি’র এক কথা ‘শাপলা’ পাচ্ছে না এনসিপি।
তার উপর জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির সাপে –নেউলে সর্ম্পক তৈরি হয়। ফলশ্রুতিতে জুলাই আন্দোলনের আগে-পরে জামায়াত ইসলামীর অতি স্নেহধন্যে বেড়ে-উঠা এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম পিআর আন্দোলনকে জামায়াত ইসলামীর রাজনৈতিক প্রতারণা এবং নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার একটি কৌশল বলে মন্তব্য করেছে। যার প্রতি ক্রিয়ায় জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার হিশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে পাল্লা দিত হলে অনেকদুর যেতে হবে, জন্ম নিয়ে বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে এমন বৈরি সর্ম্পকের মধ্যে বিএনপি এনসিপিকে ভোটের জোটে যুক্ত হওয়ার টোপ দেয়। বেশ কিছু আসন নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ৬টি এনসিপিকে আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হয় বিএনপি। কিন্তু এনসিপি এতে রাজি হয়নি। দলটি অন্তত:২০টি আসন দাবি করে।
এরিমধ্যে বিএনপি সারাদেশে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করেছে। যার মধ্যে অনেক আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন-১ ও পঞ্চগড়-১ সংসদীয় আসনটি রয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেতুলিয়া উপজেলা ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের পুত্র ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। আর এরমধ্যে দিয়ে বিএনপির কাঁধে ভর দিয়ে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সারজিস আলমের জাতীয় সংসদে যাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
সে কারণে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এক পাশে রেখে শুধু কয়েকটি সিট পাওয়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোনো জোট করবে না বলে মন্তব্য করেছেন সারজিস আলম। রোববার কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্প একাডেমি মিলনায়তনে এনসিপি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এনসিপর সঙ্গে জোট হলে ঢাকা- ১১ (রামপুরা-বাড্ডা-ভাটরা)এবং ঢাকা-৫ যাত্রাবাড়ি –ডেমরা ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। এই দুই আসনে বিএনপি এখনও কাউকে মনোনীত করেনি। ঢাকা-১১ সংসদীয় আসন থেকে প্রার্থী হতে পারে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম।
অন্যদিকে ঢাকা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বর্তমান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন এবং ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তিনি নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করবেন এবং এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব নিবেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা- ৩ (মুরাদনগর) সংসদীয় এলাকা থেকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও বিএনপি এই আসনটি ছাড়তে নারাজ। এই আসনে কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ জনপ্রিয় ও শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি গত ১৮ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার। দল তাকে এবার মূল্যায়ন করতে চায়।
তবে কুমিল্লা-৪ আসনটি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী এনসিপির দক্ষিণাঞ্চল মূখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তবে এই অআসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে। বেটে-বলে মিলে গেলে কপাল খুলতে পারে হাসনাত আব্দুল্লাহর
বিএনপির একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকায় এখনো ৮টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। এসব আসন থেকে অন্তত ৫টি আসন এনসিপিকে দিতে চায় বিএনপি। তবে ঢাকার বাইরের বিজয় নিশ্চিত এমন কোন আসন এনসিপিকে ছেড়ে দিবে না এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যদ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, কিংস পার্টি জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির গুরুত্ব ততই কমে যাচ্ছে। ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ অনিয়ন্ত্রিত ঝামেলা বা দুর্ভাগ্য তাদের দিকে ধেয়ে আসছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল গুলো থেকে ধীরে ধীরে ছায়া সরে যাওয়া নবাগত এই দলটি আসন্ন রাজনৈতিক দুর্যোগ কতটা সামাল দিতে পারবে তা এখন দেখার বিষয়।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব
![]()
