বিএনএ, সাভার : ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতীক বরাদ্দের পর ১৫টি ইউনিয়ন জুড়ে যেন এক রণেক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। চলছে ব্যাপক হামলা ভাংচুর, মারধর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক আওলাদ হোসেন সহ একাধিক ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীগণ।
এ সন্ত্রাসী তান্ডবে শতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১১জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এব্যাপারে থানা ও নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে, সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রার্থীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই যেন তারা লাগামহীন ও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। কর্মী সমর্থক ও ক্যাডার বাহিনী নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে ১৫টি ইউনিয়নের প্রত্যাঞ্চলে।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও কমী সমর্থকরা শত শত মোটরসাইকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দিয়ে দিলে পুরো এলাকাজুড়ে নেমে আসে চরম আতংক।
সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক মোঃ আওলাদ হোসেন তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বানেশ্বর এলাকায় গেলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আজাহার আলীর কর্মী সমর্থকরা আওলাদ হোসেন ও তার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। এঘটনায় কমপক্ষে ৩০-৩৫জন আহত হয়। আহতদের ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
বালিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মজিবর রহমানের কর্মী সমর্থকরা তার নিজ গ্রাম নয়াচর ও বাস্তা এলাকা থেকে ৫০-৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে কামারপাড়া গ্রামে যায়। এসময় চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ নুরে আলম সিদ্দিকী নান্নুর কর্মী মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফের মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখমসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করে।
অপরদিকে বালিয়া ইউনিয়নের আনারস প্রতীকের সতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মান্নান মধু সন্ধ্যার দিকে সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে গাড়ীতে উঠার প্রাক্কালে বালিয়া কালিঘাট এলাকায় নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। মোঃ আব্দুল মান্না মধুসহ তার নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করে বেধরক মারধর ও গাড়ী ভাংচুর করে। এতে কমপক্ষে ২০-২৫জন আহত হন।
গাংগুটিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ কাদের মোল্লার চাচাতো ভাই ও তার কর্মী সমর্থকরা আনারস প্রতীকের সতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান সরকারের কর্মীদের মারধর করে নির্বাচনী পোস্টার লাগাতে নিষেধ করে। এবং নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি প্রদান করে নৌকার কর্মী সমর্থকরা।
রোয়াইল ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ কাজিম উদ্দিন খানের কর্মী সমর্থকরা ২শতাধিক মোটরসাইকেল যোগে লাঠিসোঁটা নিয়ে মহড়া দেয়। তারা খড়ারচর বাজারে এসে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টুর নির্বাচনী অফিসের সামনে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টুকে প্রাণনাশের চেষ্টা করে এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও হুমকী প্রদর্শন করে। এলাকাবাসী একট্রা হয়ে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে তারা ফাঁকা গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায়।
আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু জানান, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। জনগণ ভোট দিতে পারলেও এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবো ইনশাল্লাহ। জীবন শেষ হয়ে গেলেও মাঠ ছাড়বনা। প্রতিপক্ষ আমার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসে অন্ত্র, লাঠি ও হোন্ডা মহড়া দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
আব্দুল মান্না মধূ বলেন, আমাকেসহ আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা গাড়ী ভাংচুর করেছে প্রতীপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। আমি বিষয়টি থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছি।
নুরে আলম সিদ্দিকী নান্নু বলেন, নির্বাচন মানেই প্রতিযোগিতা। ভয় থাকলে তাদের নির্বাচনে আসা উচিত হয়নি। পরাজয়ের ভয়ে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে মাথা ফাঁটিয়েছে ও হাত পা ভেঙেছে। এতে আমরা মোটেও ভীতসন্ত্রস্ত নই। ছাপ্পা মেরে জোর করে ভোট নিতে দেবনা। এজন্য যা যা করা দরকার তাই করব। প্রয়োজনে শহীদ হয়ে যাবো। তবু নির্বাচন সুষ্ঠু করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
এব্যাপারে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বিষয়টি একান্তই নির্বাচন কর্মকর্তার। তিনি আমাদের কোন আইনি পদক্ষেপ নিতে বললে অবশই নেব। তিনি আরও বলেন, কোন প্রার্থী যদি সংঘাতে জড়ায় তাহলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হবো। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবেনা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, এব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব প্রার্থীই আমার কাছে সমান। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্যই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
বিএনএনিউজ/ইমরান খান/ এইচ.এম