28 C
আবহাওয়া
১২:২৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০৭ (সাতক্ষীরা-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১০৭ (সাতক্ষীরা-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সাতক্ষীরা-৩ আসনের হালচাল।

সাতক্ষীরা-৩ আসন

সাতক্ষীরা-৩ সংসদীয় আসনটি আশাশুনি, দেবহাটা এবং কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল, তাড়াশিমলা,তারালী ও নলতা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১০৭তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর এ এম রিয়াছাত আলী বিশ্বাস বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৬ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৫ হাজার ৫ শত ৭০ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর এ এম রিয়াছাত আলী বিশ্বাস বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩১ হাজার ৬ শত ৩১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাফিজুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৬শত ৮০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অধ্যাপক আলী আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির অধ্যাপক আলী আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এস এম মোখলেসুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৯ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২ হাজার ৫ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এস এম মোখলেসুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৭ শত ২২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট স ম সালাউদ্দিন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৮৭ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর এ এম রিয়াছাত আলী বিজয়ী হন

২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫শত ১৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর এ এম রিয়াছাত আলী বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ৫শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এস এম মোখলেসুর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৬ হাজার ৯ শত ৮২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.ফ.ম রুহুল হক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১ হাজার ২ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৬ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.ফ.ম রুহুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪১ হাজার ১ শত ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর এ.এম রিয়াছাত আলী। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩২ হাজার ৩ শত ৪১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ.ফ.ম রুহুল হক বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.ফ.ম রুহুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আ,ফ.ম রুহুল হক বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩১ হাজার ১ শত ৪২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আ.ফ.ম রুহুল হক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ড. শহীদুল আলম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইসহাক আলী সরদার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ,ফ.ম রুহুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ১ হাজার ৬ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ড. শহীদুল আলম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২৪ হাজার ৬ শত ৭১ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-২ আসনে পঞ্চম ও অষ্টম সংসদে জামায়াতে ইসলামী। ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সাতক্ষীরা -৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৯৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.০৬ %, বিএনপি ২.৬৫%, জাতীয় পার্টি ২৩.১২% , জামায়াতে ইসলামী ৩৩.১০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১০.০৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৪২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৭৩%, বিএনপি ৬.৩০%, জাতীয় পাটি ৩১.২৯%, জামায়াতে ইসলামী ২২.৮৮ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪২.৬১%, ৪দলীয় জোট ৫৫.০২%, জাতীয় পার্টি ২.৩৮%, ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৬২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.৯১%, ৪দলীয় জোট ৪৭.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩৫% ভোট পায়।

সাতক্ষীরার-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগ থেকে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, বিশিষ্ট শিল্পপতি, প্রাসাদ গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ ও আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রখ্যাত হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ড্যাব নেতা ড. শহীদুল আলম। ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসাবে বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশার ।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দেবহাটা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আবুল ফজল ও ছাত্রসমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট স ম সালাউদ্দিন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-৩ আসনটি ভিআইপিদের আসন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায়। এ ছাড়া প্রার্থী হতে চান শিল্পপতিরাও। তালিকায় আছেন ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন আ ফ ম রুহুল হক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তবে এলাকায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কম, এমনটাই অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এ অভিযোগ খণ্ডন করে রুহুল হক বলেন অবহেলিত জনপথের উন্নয়নে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত না হলেও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই মজবুত। নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। কিছুদিন আগে তাদের দেখাই যায়নি। কিন্তু নির্বাচন যতই কাছে আসছে ততই তাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগে রয়েছে চরম অন্তকোন্দল। সেই দিক থেকে এগিয়ে আছে বিএনপি জোট। জামায়াত – বিএনপি জোট চাইবে আওয়ামী লীগকে দখলচ্যুত করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে দখল বজায় রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১০৭ তম সাতক্ষীরা-৩ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ