বিএনএ, ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় পুলিশের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডসহ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মিজানুর রহমানের আপিল খারিজ করে দিয়ে বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার একক হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ রায় দেন। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ডিআইজি মিজান নামেই পরিচিতি পেয়েছিলেন।
আদালতে মিজানুর রহমানের আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শফিক মাহবুব ও পারভীন সুলতানা। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
দুদকের আইনজীবী বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে বিচারিক আদালত মিজানুর রহমানকে জরিমানা করেছিলেন। হাইকোর্ট সে জরিমানাও বহাল রেখেছেন। ফলে তাঁকে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে। আর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। সে আদেশটিও বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী শফিক মাহবুব বলেন, বিচারিক আদালতের রায়টি হাইকোর্ট ব্যাখ্যাসহ বহাল রেখেছেন। লিখিত রায় পেলে ব্যাখ্যাগুলো জানতে পারব। বিচারিক আদালত মিজানুর রহমানকে তিনটি ধারায় যথাক্রমে তিন বছর, ছয় বছর ও পাঁচ বছর মিলিয়ে মোট ১৪ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। রায়ে আদালত বলে দিয়েছিলেন সাজাগুলো কনকারেন্টলি (একসঙ্গে) চলবে। সে রায়টিই বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ফলে মিজানুর রহমানকে ছয় বছর সাঁজা খাটতে হবে। ইতিমধ্যে তিনি চার বছর আট মাস জেল খেটে ফেলেছেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, মক্কেলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা না আসায় কিছু বলতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে আপিল করবেন না।
তিন কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তিন কোটি সাত লাখ পাঁচ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৪ জুন মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মিজানুর রহমান তাঁর ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২৪ লাখ ২১ হাজার ২২৫ টাকায় গুলশান-১-এর পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে ২১১ বর্গফুট আয়তনের একটি দোকান বরাদ্দ নেন। মিজানুর রহমান নিজে নমিনি হয়ে তাঁর ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর একটি ব্যাংকে এফডিআর অ্যাকাউন্ট করে ৩০ লাখ টাকা জমা করেন। তবে দুদক অনুসন্ধান শুরু করলে সেই টাকা ভাঙিয়ে সুদে আসলে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা তুলে ফেলেন।
অভিযোগে বলা হয়, মিজানুর রহমান তাঁর স্ত্রী রত্না কাকরাইলে ১৭৭৬ বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ক্রয়ে ২০১১ সালে চুক্তিনামা করে বিভিন্ন সময় এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা নির্মাণ কোম্পানিকে পরিশোধ করেন। পরে ২০১৬ সালে ফ্ল্যাটটি ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করেন।
তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ওই বছর ২০ অক্টোবর ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আসিফুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৩৩ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্য নেন বিচারিক আদালত। গত বছরের ৫ জুন দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর ২১ জুন ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম মামলার রায় দেন।
রায়ে মিজানুর রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় তিন বছর, ২৭(১) ধারায় ছয় বছর এবং অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া এই মামলায় মিজানুর রহমানের স্ত্রী, ভাই ও ভাগ্নেকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়ে। আদালত রায়ে বলে দেন, সব সাঁজা একসঙ্গে চলবে। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন মিজানুর রহমান। সে আপিল খারিজ করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানুর রহমানকে। তাঁর বিরুদ্ধে বৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলার মধ্যেই দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আরেকটি মামলা হয়। ওই মামলায় মিজান-বাছির দুজনই আসামি ছিলেন। ঘুষকাণ্ডের পর এনামুল বাছিরও সাময়িক বরখাস্ত হন। ঘুষের মামলায় ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মিজানের তিন বছরের এবং বাছিরের আট বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিএনএনিউজ/ বিএম/ হাসনা