বিএনএ, যবিপ্রবি: কোভিড ১৯ নিয়ে বিস্তর গবেষণার পর এবার ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণায় আবারও আলোচনায় এসেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টার। নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গবেষণায় একের পর এক সাফল্যে যেন যবিপ্রবিকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
এই সাফল্যের পিছনে যে দুইজন মানুষের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন, একুশে পদক জয়ী বিশিষ্ট অণুজীববিজ্ঞানী যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ একাডেমী অব সায়েন্সেসের সহযোগী ফেলো অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ।
২০২০ সালে যখন করোনার ভয়াল থাবায় সবকিছু বন্ধ হতে বসেছিল অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ এবং তার গবেষণা দল নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে গেছেন। শুধু তাই নয় করোনার সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ ডেল্টা এর জিনোম সিকুয়েন্স সর্বপ্রথম যবিপ্রবি থেকেই করা হয়েছিল যা সে সময় অনেক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সাইবার গ্রিন নামে নতুন করোনা শনাক্তের পদ্ধতি এই যবিপ্রবির গবেষক দল থেকেই এসেছিল।
করোনার সফল ভাবে গবেষণার পর এবার জিনোম সেন্টার গবেষণা চালাচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচলকের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আমরা করোনার মত ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিকভাবে আমরা যশোর জেলার আশেপাশে কিছু জেলা ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল এবং যশোর জেলার ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের স্যাম্পল নিয়ে বিস্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই একটি গবেষণার ফলাফল জিএসআইডিতে জমা দেয়া হয়েছে এবং একটি পাবলিকেশন পিয়ার জার্নালে আছে।
তিনি জানান, খুব দ্রুতই সেটা প্রকাশিত হবে। ডেঙ্গুর পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স করে তা থেকে অনেক কিছু তথ্য গবেষক দল জানতে পারবেন এবং এই ডেঙ্গুর ধরণ এর কি ধরণের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে সেগুলিও এর আওতায় আসবে।
অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ আরও বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের মানুষকে আমাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে। আমরা ইতিমধ্যেই প্রোবায়োটিক নিয়ে কাজ করেছি যা সাধারনের জন্য কল্যাণে আসছে। আমাদের এই ধরণের গবেষণা প্রতিনিয়ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন এলসিভিআর এর স্কোপাস ডাটাবেইজের তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ১ম স্থানে অবস্থান করছে যা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অতি খুশির খবর।
জিনোম সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে বিশ্বমানের যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ জনবল। জিনোম সেন্টারে কর্মরত মাসুদুর রহমান বলেন, জিনোম সেন্টার যেভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে যা সত্যি অনেক আনন্দের এবং গর্বের বিষয়।
আরেক শিক্ষার্থী প্রশান্ত কুমার জানান, প্রতিনিয়ত বিশ্বমানের গবেষণা চলমান আছে এখানে। শুধু তাই নয় এখান থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক সুবিধাও দিয়ে থাকে জিনোম সেন্টার। সেখানে বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য Sanger Sequencing, PCR, RT PCR, Genome Sequencing সহ আরও অনেক কিছু। কিছু পরীক্ষা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সেগুলো বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে যবিপ্রবির অভূতপূর্ব সাফল্যতে উপাচার্য বলেছেন, এই বছরেই যবিপ্রবিতে আরও ৪টি অতি অত্যাধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে যা বাংলাদেশে BCSIR ছাড়া কোথাও নেই। নতুন ল্যাব প্রতিষ্ঠা এবং যেভাবে যবিপ্রবি গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে আশা করা যায়। একদিন যবিপ্রবি সারাদেশের মধ্যে একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং শিক্ষা ও গবেষণায় জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিবে।
বিএনএনিউজ/ আরাফাত/ বিএম