বিএনএ বিনোদন ডেস্ক: ধর্ম মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে যুগে ধর্মান্তরিত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সেই তালিকায় রয়েছে তারকাদেরও নাম। জনপ্রিয় কয়েকজন তারকা যারা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এমন সাত তারকার ধর্মান্তরিত হওয়ার গল্প বলছি আজ-
ধর্মেন্দ্র : বলিউড সুপারস্টার ধর্মেন্দ্র তার অ্যাকশন এবং রোমান্টিক অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। এ তারকার প্রকৃত নাম ছিল ধরম সিং দেওল। বলিউডের এ তারকা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৯৭৯ সালে। বলিউড অভিনেত্রী হেমা মালিনীকে বিয়ে করতেই তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। যদিও হেমা মালিনীকে বিয়ের আগে ধর্মেন্দ্র বিবাহিত ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল প্রকাশ কর। সে স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে ধর্মেন্দ্রর চার সন্তান ছিল বলেও খবর পাওয়া গেছে। তার দ্বিতীয় বিয়েকে প্রতিরোধের জন্য সে সময় অনেক ঘটনায় ঘটেছিল। কিন্তু কোনো কিছুকে পাত্তা না দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন এ কিংবদন্তী অভিনেতা। বিয়ের পরে জানা গেছে দুটি সংসারই ভালোভাবে দেখভাল করেছেন ধরমজি।
শর্মিলা ঠাকুর : সবার উপরে প্রেম সত্য। এ কথাকে বাস্তবে রুপ দিয়েছেন বলিউডের লাস্যময়ী সুন্দরী অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। প্রেমের কারণে ধর্মান্তরিত হওয়া অভিনয় শিল্পীর তালিকায় রয়েছে এ শিল্পীর নামও। ২০১৩ সালে ভারতীয় সরকারের নিকট হতে পদ্মভূষণ পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী প্রেমে পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পাতৌদির। সে কারণে বিয়ে করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন বলিউড এ অভিনেত্রী। ১৯৪৬ সালে একটি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। বিয়ের পর নিজের নাম পাল্টিয়ে আয়েশা বেগম রেখেছিলেন শর্মিলা। বিয়ের পর মনসুর-শর্মিলার ঘরে জন্ম হয় বলিউড তারকা সাইফ আলি খান, অলংকারিক সাবা আলি খান, এবং বলিউড অভিনেত্রী সোহা আলি খানের। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মারা যায় শর্মিলা পতি মনসুর আলি খান পাতৌদি।
মাইকেল জ্যাকসন : বিখ্যাত পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসন বিশ্বসংগীত অঙ্গনে নিয়ে এসেছিলেন আমূল পরিবর্তন। নাচ এবং গানের মাধ্যমে বিশ্বসংগীত একটি অনন্য মাত্রায় পৌঁছান তিনি। এই পপ তারকা খ্রিষ্টান ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পরে তার নাম রাখা হয়েছিল মিখায়েল। ধারণা করা হয় এ পপ শিল্পীর প্রযোজক বন্ধু গীতিকার ডেভিড ওয়ার্ন্সবাই এবং ফিলিপ বুবালের অনুপ্রেরণায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মাইকেল জ্যাকসন। তারা মাইকেলকে বলেছিলেন উচ্ছৃঙ্খল জীবনকে সাজাতে ইসলাম গ্রহণটা খুবই প্রয়োজন তার। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে প্রশাসনিক মসজিদের একজন ইমামকে ডেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন মাইকেল জ্যাকসন।
হ্যান্স রাজ হ্যান্স : ভারতীয় এ সংগীত শিল্পীর ইসলাম গ্রহণের গুঞ্জন প্রথম প্রকাশ পায় পাকিস্তান মিডিয়ায়। আজা নাচলে, দিল টোটে টোটে, দামা দাম মাস্ত ক্যালেন্ডারের মতো বিখ্যাত গানের শিল্পী হ্যান্স রাজ জন্মসূত্রে একজন শিখ। এক প্রতিবেদনে বলা হয় ইসলাম প্রচারের পরে এ শিল্পী ইসলামের পবিত্র ভূমি মদিনাতেও যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এ শিল্পী বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন ইসলামী বই পড়ছেন বলে খবর প্রকাশ পায়। ইসলাম গ্রহণের মূল কারণ তার সূফী গানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সূফী গানের উৎপত্তি ইসলাম থেকেই। উল্লেখ্য এ শিল্পীর ছেলে নাভরাজ তার পিতার সম্পর্কে এ তথ্য সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন।
অমৃতা সিং : ছোটবেলা থেকেই শিখ পরিবারে বড় হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী অমৃতা সিং। ১৯৮৩ সালে বেতাব সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক হয় অমৃতার। তারপর সানি, মার্দ, সাহেবের মতো বেশ কয়েকটি ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দেন এ অভিনেত্রী। বলিউড তারকা অভিনেতা সাইফ আলি খানকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন অমৃতা। দীর্ঘ ১৯ বছর সংসার জীবন অতিক্রম করে ২০০৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন সাইফ এবং অমৃতা। সাইফ তারপর বিয়ে করেন বলিউড তারকা অভিনেত্রী কারিনা কাপুরকে। কারিনা অবশ্য এখনও ধর্মান্তরিত হননি।
জুভান শঙ্কর রাজা : কিংবদন্তী সংগীত শিল্পী ইলাইয়া রাজার পুত্র জুভান শঙ্কর রাজা। কিন্তু শুধু পিতার নামেই পরিচিত নন জুভান। কম বয়সি গীতিকার হিসেবে জুভান পেয়েছিলেন খ্যাতি। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই প্রথম তামিল একটি গানের কম্পোজ করেন তিনি। মূলত মায়ের মৃত্যুর পর খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলেন জুভান। তখন তার এক বন্ধু মক্কা থেকে হজ্ব করে ফিরে তাকে একটি জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। তখন জুভান সেই জায়নামাজে বসে কোরআন পাঠ করেন। এদিকে জুভানের পিতা ইলাইয়া রাজা ছিলেন কট্টর হিন্দু। তার বাবা সামান্য কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে গেলেও পণ্ডিত ডাকতেন বলে জানা যায়। তা সত্ত্বেও জুভান পেয়েছিলেন ইসলামের মতো পরশ পাথরের ছোঁয়া। কোরআন পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে জুভান তার সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন।
এ আর রেহমান : অস্কার জয়ী এ ভারতীয় সংগীত শিল্পী তার সংগীতের জন্যই বিশ্বখ্যাত। হিন্দু ধর্মে থাকার সময় এ সংগীত শিল্পীর নাম ছিল এ এস দিলিপ কুমার। ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম হয়েছে আল্লা রাখা খান। তবে তিনি এ আর রেহমান নামেই বেশি পরিচিত। ছোট বেলায় ধর্মে খুব একটা বিশ্বাস করতেন না এ আর রেহমান। ১৯৮৪ সালে কিংবদন্তী এ শিল্পীর বোন কয়েক দফায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সে মুহূর্তগুলোতে তার বোন ধর্মের আদর্শ এবং মূল্যবোধ নিয়ে জ্বরের ঘোরের মধ্যে বিড়বিড় করতেন। তখন এ সংগীত শিল্পীর পরিচয় হয় কাদিরি ইসলামের সঙ্গে। ঠিক তখনই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস এনে এ ধর্ম গ্রহণ করেন এ আর রেহমান।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ