অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন সাংবিধানিক ও ঐক্যমত এই দুই সংকটে ভূগছে। ফলে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ বা অপসারণের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকারে আরও কিছু উপদেষ্টা নিয়ে একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবী সরকার গঠনের দিকে হাটছে। আড়াই মাস পর সরকারের বোধোদয় হয়েছে সাংবিধানিক কাঠামোতে অবস্থান করে সংস্কার ও রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
সেকারণে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, সরকার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই সাংবিধানিক পথে যাত্রা শুরু করেছে। ‘যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।’
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা: আসন্ন চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গত ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আদর্শ ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান, ব্রেইন যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।
সাংবিধানিক পথে যাওয়া দোষের ব্যাপার নয় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, তখন এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে খুব সময় নিয়ে সুচিন্তিতভাবে চিন্তা করার মতো পরিবেশ ছিল না। আর যদি সাংবিধানিক পথে যাত্রা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা এই আন্দোলনে থাকা সবার ভুল।
সভায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ কীভাবে সাংবিধানিক পথে গেল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
প্রসঙ্গত, উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অপসরণের জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এতে সায় দেয়নি। গত ২৩ অক্টোবর বিএনপির প্রভাবশালী তিন স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তারা রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বা পদত্যাগে বাধ্য করে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি না করার আহ্বান জানান। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে তৎপর রয়েছেন। ২৫শে অক্টোবর এক সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্মতি না থাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তাদের রাজনৈতিক প্লাটফরম জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং তাদের সমর্থিত জামায়াতে ইসলামী রাজপথে আন্দোলন করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে সরানোর ক্ষেত্র তৈরি করা থেকে আপাতত: দূরে রয়েছে।
সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করার বিষয়ে ২৬ অক্টোবর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির ৭ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির কয়েকজন নেতা। কিন্তু বিএনপি তাদের আগের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে।
বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত ২৩ অক্টোবর আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম। ফ্যাসিবাদ বিলুপ্তের আরেকটি বাধা হিসেবে আমাদের সামনে এখন এসে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ।
বিএনপি’র একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর পরার্মশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক কমিটিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে ফ্যাসিস্ট ট্যাগ লাগিয়ে অপসারণ করে একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চায়। যাতে বিপ্লবী সরকার গঠন করে নির্বাচনকে বিলম্বিত করা যায়। সেই সুযোগে নিজেদের ক্ষমতাসীন হওয়ার একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। বিষয়টি বিএনপির নীতি নির্ধারকরা টের পেয়েছে। ফলে জামায়াত ইসলামীর ফাঁদে পা দিতে চায় না বিএনপি।
বিএনএনিউজ,সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী