খুতবা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা, প্রস্তাবনা, ভাষণ, ঘোষণা, সম্বোধন ইত্যাদি। খুতবা জুমার নামাজের আগে দিতে হয়। জুমার নামাজের জন্য খুতবা দেওয়া ওয়াজিব। জুমার খুতবার আগে প্রত্যেক মসজিদে সাধারণত দ্বীনি আলোচনা হয়ে থাকে। জুমার দিন যেহেতু মুসল্লিরা নামাজের নির্ধারিত সময়ের আগেই মসজিদে উপস্থিত হন, মুসল্লিগণ নামাজের অপেক্ষায় বসে থাকেন। তখন মানুষকে দ্বীনের প্রতি উৎসাহমূলক স্থানীয় ভাষায় কিছু বক্তৃতা দেওয়া জায়েজ আছে। তবে তা জরুরি নয়। কিন্তু জায়েজ। যেমনটি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ও তাবেয়িদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, অতঃপর বসতেন, পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন—আজকাল তোমরা করে থাকো।
হজরত আবদুল্লাহ বিন বুছর (রা.) জুমার দিন প্রথমে ওয়াজ করতেন। যখন খতিব খুতবার জন্য আগমন করতেন, তখন তিনি ওয়াজ বন্ধ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১/২৮৮, হাদিস: ১০১২)
হজরত তামিম দারি (রা.), হজরত ওমর (রা.) ও হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে খুতবার পূর্বে ওয়াজ করতেন। (মুসনাদে আহমদ: ৩১/৩৩১, হাদিস: ১৫১৫৭)
এ বয়ান খতিব সাহেব বা অন্য কেউ করতে পারেন। আসেম (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমার দিন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর বিভিন্ন বাণী পেশ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১/১৯০, হাদিস: ৩৩৮)
উল্লেখিত হাদিসগুলো জুমার খুতবার আগে স্থানীয় ভাষায় দ্বীনি আলোচনা জায়েজ হওয়ার প্রমাণ। তাছাড়া, দ্বীনি আলোচনার অনেক ফজিলত রয়েছে। বয়ান তথা দাওয়াতের গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে বাধা দান করবে। তারাই হলো সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৪)
বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী (স.) বলেন, ‘তোমরা একটি আয়াত হলেও আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও।’ (তিরমিজি: ২৬৬৯)
জুমার দিনের বয়ানের সুন্দর পদ্ধতি হলো- প্রথম আজানের পর আলোচক আলোচনা শুরু করবেন, মুসল্লিরা এসে নীরবতার সঙ্গে বয়ান শুনবেন। খুতবার পাঁচ-দশ মিনিট আগে তা শেষ করে মুসল্লিদের সুন্নত পড়ার সুযোগ দেবেন। এরপর খতিব সাহেব আজানের পর আরবি ভাষায় দুটি খুতবা দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নামাজ পড়াবেন। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১২/৩৮৬-৩৯২)।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ