বিএনএ, ঢাকা: দেশে টাকার সমস্যা নয়, অভাব ডলারের। বৈধ চ্যানেলে প্রবাসীরা দেশে অর্থ বেশি বেশি পাঠালে এই অভাব কেটে যেতে পারে, তাছাড়া বিদেশি ঋণেরও সহযোগিতা দরকার।
একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে প্রকাশ, জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। চাইলেও ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বিল পরিশোধে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ বাড়ছে সরকারী প্রতিষ্ঠানটির বিপিসির ওপর।
বিপিসি সূত্র বলছে, ২২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার বিল বকেয়া জমেছে বিপিসির। বছরে বিপিসির ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল লাগে। প্রতি মাসে ৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ১ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আনতে ১৭ থেকে ১৮টি ঋণপত্র খোলার দরকার হয় বিপিসির। ডলারে ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলো নিয়মিত গড়িমসি করছে। একটি ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধে ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মাঝেমধ্যে ২ কোটি ডলার করে ছাড় করলেও তা দিয়ে বকেয়া পুরোপুরি পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
তবে জ্বালানি তেলের মজুত পরিস্থিতির অবনতি এখনো হয় নি। ২২ আগস্ট পর্যন্ত ডিজেলের মজুত ছিল ৪ লাখ ২৬ হাজার টন। তা দিয়ে দেশের অন্তত ৩৫ দিনের চাহিদা মেটানো যাবে। পেট্রোলের মজুত আছে প্রায় ২৩ হাজার টন, যা দিয়ে ১৮ দিন চলবে। অকটেন আছে ৩৩ হাজার ২২৮ টন, যা ২৫ দিনের চাহিদার সমপরিমাণ মজুত। যদিও পেট্রোল ও অকটেনের একটি বড় অংশ দেশে উৎপাদিত হয়। তাই এ নিয়ে অতটা অনিশ্চয়তা নেই। উড়োজাহাজে ব্যবহৃত জেট ফুয়েল আছে ৪০ হাজার ২৫ টন, যা দিয়ে ২৬ দিনের চাহিদা মেটানো যাবে।
ফার্নেস তেলের মজুত ফুরিয়ে আসছে!
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস তেল আছে ৩৩ হাজার ৪৫২ টন। এ পরিমাণ তেল দিয়ে ১২ দিন চলার কথা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখন তেলের চাহিদা আছে। কিন্তু অধিকাংশ সরবরাহকারী ফার্নেস তেল দিতে রাজি হচ্ছে না। ৩০ আগস্টের মধ্যে ফার্নেস তেল নিয়ে একটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। এটি পিছিয়ে গেলে সংকট তৈরি হতে পারে।
জ্বালানি তেল বিক্রি করে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মুনাফা করছে বিপিসি। গত মার্চ থেকেই প্রতি মাসে মূল্য সমন্বয় করছে তারা। তাই সংস্থাটির আর লোকসানে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু বিদেশি দেনা পরিশোধে ডলার জোগাড়ে আড়াই বছর ধরেই সমস্যার মধ্যে আছে তারা। এর মধ্যে গত মাস জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পরিবর্তন ঘিরে ব্যাংক বন্ধ ছিল বেশ কয়েক দিন। এতে বিপিসির সমস্যা আরো বেড়েছে।
সরকার কী করছে ?
সচিবালয়ে গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমদানি বিল ২২০ কোটি ডলার বকেয়া পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বকেয়া পরিশোধে ১০০ কোটি ডলার প্রদানের জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করেন তিনি। আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বকেয়া পরিশোধে গত বৃহস্পতিবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা।
অন্যদিকে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়ার পর গত ২৫ আগস্ট, ২০২৪ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথমবারের মত জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বিদেশগামী শ্রমিক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে জানিয়ে বলেন, বিদেশে অবস্থানরত সকলের কাছে আমার আবেদন, তারা যেন তাদের উপার্জিত অর্থ অফিসিয়াল চ্যানেলে দেশে পাঠান। দেশের অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে এই অর্থ বিশেষভাবে প্রয়োজন। কী কী ব্যবস্থা নিলে তাদের জন্য অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানো সহজ হবে সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ প্রদানের অনুরোধ জানান।
নিজামুদ্দিন আউলিয়া এক সময় ডাকাত ছিল না?
এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, বাধ্য না হলে বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাসের দাম সরকার বাড়াবে না।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুইক রেন্টাল, গ্যাস সরবরাহ সংকটসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা এনার্জি সিকিউরিটি অব বাংলাদেশকে একটা পজিশন পেপার তৈরি করতে বলেছি। যেটা উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে যাব।’
যে কর্মকর্তারা আগের সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক বিষয়কে সাপোর্ট করেছেন, তাদের যদি আবার দায়িত্ব দেন পজিশন পেপার তৈরি করার জন্য, সেটা কতটুকু নৈতিক হবে- জানতে চাইলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘নিজামুদ্দিন আউলিয়া এক সময় ডাকাত ছিল না? মানুষকে পরিবর্তনের সুযোগ দেবেন।
ধরেন একটা খুব খারাপ লোক আমি জানি, কিন্তু ওনার তো একটা অভিজ্ঞতা আছে। যারা খারাপ কাজ করে তারা কিন্তু খুব ভালো জানে। আমার জায়গায় আপনি হলে কি করতেন? আমি ওনাকে রাখলাম কিন্তু উনি আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করলেন, এটা কি ভালো? নাকি একজন নবিশকে আনলাম সে কিছুই জানে না সে তো উল্টা আরও বড় ক্ষতি করবে।’
মানুষ যেভাবে খুশি হয়; সেদিকেই আমাদের যেতে হবে
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যে লাখ লাখ মানুষ বেরিয়ে এলো, এর মানে সরকার যে কাজ করছে এটা তাদের পছন্দ নয়। সেই সরকার অনেক গল্প বলেছে, তা মানুষ বিশ্বাস করেনি। এজন্য মানুষ নেমে এসেছে। আমরা বলেছি গাল-গল্পের দিন শেষ। মানুষ যেটা চায়, মানুষ যেভাবে খুশি হয়; সেদিকেই আমাদের যেতে হবে। জনপ্রত্যাশা পূরণে আমাদের যা যা করণীয়, তাই করব। ’
এসজিএন/হাসনা