বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে দুই দফা আত্মঘাতি বিস্ফোরণে দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট-আইএসআইএল। আত্মঘাতীর ছবিও প্রকাশ করেছে নিষিদ্ধ এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি।
বিবিৃতিতে তারা জানায়, সহযোগী সংস্থা ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট খোরাশান (আইএসকেপি) এই হামলা চালিয়েছে। যারা এর আগে মার্কিন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধ করেছে। অবশ্য আইএসকেপি তালেবানেরও পুরনো শত্রু।
আইএসআইএল জানায়, মার্কিন অনুবাদক ও সহযোগীদের ভীড়ের মধ্যে যেতে সক্ষম হয় তাদের আত্মঘাতী হামলকারী। বিমানবন্দরের ব্যারক ক্যাম্পের পাশে গিয়ে সে তার আত্মঘাতী হামলাটি চালায়।
এই আইএসকেপি কারা ?
আইএসআইএল আফগানিস্তানে যে নাম ব্যবহার করে তা হলো ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট খোরাশান প্রদেশ-আইএসকেপি। আধুনিক আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ে যে অঞ্চল তার প্রাচীন নাম থেকে এখানে খোরাসান শব্দটি এসেছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আইএসকেপি গোষ্ঠীর জন্ম হয়। মূলত পাকিস্তানি তালেবান এবং আফগান তালেবানের সাবেক সদস্যদের নিয়ে এই গোষ্ঠী গঠিত হয়েছে।
আফগানিস্তানের তালেবানের চেয়ে বহুগুণ বেশি কট্টরপন্থী আইএসকেপি। আফগান তালেবানকে তারা শত্রু বলে মনে করে। তালেবানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো ‘জায়েজ’ (বৈধ/আইনসিদ্ধ) বলেও মনে করে তারা।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের তালেবানের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়, সেটির নিন্দা জানায় আইএসকেপি। সেইসঙ্গে আফগানিস্তানে তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে বলে জানায় জঙ্গি গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি তালেবানের আফগানিস্তান দখলকে নাকচ করে দিয়ে এই গোষ্ঠী দাবি করে যে এক গোপন চুক্তির অংশ হিসেবে আফগানিস্তানকে তালেবানের হাতে তুলে দিয়েছে আমেরিকানরা ।
আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বা বোমা হামলার জন্য আগে তালেবানকে দায়ী করা হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করার পর এখন এ ধরনের হামলার জন্য ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএলকে দায়ী করা হয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে দুই দফা আত্মঘাতি বিস্ফোরণে ১২ মার্কিন সেনাসহ অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪০ জনের বেশি। হতাহতদের মধ্যে বেসামরিক আফগান নারী ও শিশু রয়েছে। তালেবানের সঙ্গে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির পর আফগানিস্তানে এই প্রথম মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
জি নিউজ জানিয়েছে, কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া বিস্ফোরেণ নিহতের সংখ্যা ৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আফগান নাগরিক। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, হতাহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও রয়েছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তালেবান বলেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা স্থানে বিদেশি সেনাদের উপস্থিতিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়েরও উচিত বেসামরিক আফগানদের লক্ষ্য করে এই হামলার নিন্দা জানানো।
বিস্ফোরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাককেঞ্জি বলেছেন, আফগানিস্তানে এখনো প্রায় এক হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছে। তাই সেখান থেকে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং এ বিষয়ের ওপর তারা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, মিরাদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, বিস্ফোরণের শব্দে মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষ। তালেবানরা তখন বিমানবন্দরের গেটে ভিড় জমানো মানুষদের ছত্রভঙ্গ করতে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। বিচ্ছিন্ন মরদেহগুলো একত্রে করে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট তালেবানের আগ্রাসনের মুখে পশ্চিমাসমর্থিত আশরাফ ঘানি সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকেই কাবুল চালাচ্ছে তালেবান। যদিও তারা সবার জন্য ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছে। তবে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আফগানিস্তান ত্যাগের হিড়িক পড়ে গেছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি